রাকসু নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে ৬ ভিপিপ্রার্থী

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে এবং শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা।

রাকসু সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সংসদে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৩২০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলে মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।


প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নির্বাচনী আমেজ। আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, আড্ডাস্থল কিংবা খাবারের দোকান—সবখানেই আলোচনার মূল বিষয় রাকসু নির্বাচন। প্রার্থীদের ভাবমূর্তি, অভিজ্ঞতা ও কর্মতৎপরতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্লেষণ করছেন। জুলাই বিপ্লবেও তাঁদের ভূমিকা নিয়ে চলছে আলোচনা। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ক্লাস ও পরীক্ষার অনিয়ম দূরীকরণ, র‌্যাগিং প্রতিরোধ, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত আসন নিশ্চিতকরণ, গ্রীষ্মকালে হলে পানির সংকট সমাধান কিংবা মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণ—সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা।

ঘোষিত প্যানেলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচনায় থাকা ভিপি প্রার্থীরা হলেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের শেখ নূর উদ্দিন আবীর, বামপন্থী ছয় সংগঠনের ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’-এর ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের মেহেদী মারুফ, ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের মেহেদী সজীব এবং রাকসু ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপিপ্রার্থী ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের তাসিন খান।

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমাদের প্যানেল সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক। নারী শিক্ষার্থী, সংখ্যালঘু, সাংস্কৃতিক কর্মী, আহত জুলাইযোদ্ধা—সবাই আমাদের দলে রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান—সবাইয়ের ভিপি হবো। যে মেয়ে বা বোনটি পর্দা ছাড়া চলে, তারও ভাই হবো; আবার যে ধর্ম মেনে পর্দা করে, তারও অধিকার রক্ষা করবো। শিবিরকে ঘিরে যে মিথ প্রচলিত ছিল, তা ভেঙে গেছে। এবার শিক্ষার্থীরাই আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন ভোটের মাধ্যমে।

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করেছি। এবারও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করব। শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা ও নারীদের সাইবার নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের রায় আমরা মাথা পেতে নেব।

বামপন্থী ছয় সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’-এর ভিপি প্রার্থী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শিক্ষার্থী প্যানেলে আসতে সাহস পাননি। ক্যাম্পাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে, সাইবার বুলিং শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত করছে। আমাদের অর্থ নেই, আতর বিতরণ বা বিরিয়ানি পার্টি করার সামর্থ্যও নেই। তবে আমাদের শক্তি হলো দীর্ঘদিনের আন্দোলন আর শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অভিজ্ঞতা। আমরা বিশ্বাস করি, মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সংলাপ ও শিক্ষার্থীদের অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, আমাদের প্যানেল শেষ মুহূর্তে গঠিত হলেও আমরা তিনজন সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছি। জুলাইয়ের আগেও নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কেউ আমাদের অন্য দলের ছায়া বললেও আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীদের সচেতন ভোটেই আমাদের জয় আসবে। আমি শতভাগ আশাবাদী।

‘রাকসু ফর র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী, ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, আমাদের লক্ষ্য মৌলিক পরিবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-পরিবেশ অনুকূল নয়, বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দূরত্বও বেড়েছে। আমরা এমন একটি রাকসু চাই, যা শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে।

ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’-এর তাসিন খান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এ সমন্বয়ক বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হইনি। আমরা ভেবেছিলাম জুলাই গণভ্যুথানের পর ছাত্ররাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে, কিন্তু দলীয় সংগঠনগুলো এখনো লাগামহীন। রাকসু সেই লাগাম টেনে ধরার সুযোগ। তাই আমি স্বতন্ত্রভাবে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছি। শিক্ষা-পরিবেশ অনুকূল নয়, র‌্যাগিং, আবাসন সংকট, কাউন্সেলিং ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব, নারী শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অবহেলা—এসব সমস্যার সমাধানে আমি কাজ করতে চাই। আমার কণ্ঠস্বর কোনো মতাদর্শের নয়, ছাত্রসমাজের। আমি চাই একটি স্বতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দায়িত্বশীল রাকসু।


আমার বার্তা/জেএইচ