
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধি, চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি, একাডেমিক ক্যারিয়ার গঠন, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা ও আত্মতৃপ্তির জন্য স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সে (স্নাতকোত্তর) আগ্রহ কমে যাচ্ছে। স্নাতকে যেই পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হন স্নাতকোত্তরে আসলে দেখা যায় অনেকেই এই এক বছর নষ্ট করতে নারাজ। শিক্ষার্থীদের দাবি, অবজেক্টিভ বেইসড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলামে স্নাতকোত্তরের জন্য দেড় বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। যেই কারণে অনেকেই মাস্টার্স না করে ক্যারিয়ার গঠন ও চাকরির পিছনে ছুটছেন। আবার অনেকে স্নাতকোত্তর না করার জন্য মানসিক চাপ, ব্যক্তিগত কারণ, শিক্ষকদের অসম মার্ক বন্টন, পরিবারের হাল ধরা, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে গমনসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিল ৬১ জন। কিন্তু স্নাতকোত্তর করছেন ৪৩ জন। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শিক্ষার্থী ছিলেন ৫৯ জন, পরে ২৫ জন কমে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন ৩৪ জন।
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স আ্যান্ড ইইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে ২০১৮- ১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছিলেন ৪৪ জন একই ব্যাচে ৩০ জন কমে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন ১৪ জন।
বিজ্ঞান অনুষদের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছিলেন ৪২ জন স্নাতকোত্তর করছেন ৩৩ জন। পরিসংখ্যান বিভাগে স্নাতক করেছেন ৩৫ জন এবং স্নাতকোত্তর করেছেন ২৬ জন। গণিত বিভাগে একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছেন ৬০ জন কিন্তু স্নাতকোত্তরে এসে রয়েছেন ৪৬ জন।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছিলেন ৫৮ জন এবং স্নাতকোত্তর করছেন ৫১ জন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছেন ৪৯ জন এবং স্নাতকোত্তর করেছেন ৪৬ জন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছেন ৩৭ জন ৮ জন কমে স্নাতকোত্তর করছেন ২৯ জন।
কলা ও মানবিক অনুষদে বাংলা বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক করেছেন ৫৮ জন এবং স্নাতকোত্তর করছেন ৫৬ জন
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাথী আক্তার বলেন, "আমি চাই নতুন পরিবেশে কিছু ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ নিতে, তার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে মিশে তাদের কালচার সম্পর্কে জানতে যা আমার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তাই বিদেশে গিয়ে মাস্টার্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কুবিতে অনেক কিছুই ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। তবে গবেষণা ও শিল্প–সংযোগ (industry linkage) আরও শক্তিশালী করা গেলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরও বেশি যুক্ত হতে পারবে বলে মনে করি। তাছাড়া যদি মার্ক ডিস্ট্রিবিউশন এর কথা বলি, তাহলে এই ক্ষেত্রে অসমতা লক্ষনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে গবেষণার সুযোগ আরও বাড়াতে পারে—যেমন শিক্ষার্থীদের ছোট গবেষণা প্রজেক্টে যুক্ত করা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ কাজের সুযোগ তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া। এতে কুবির সুনাম ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা দুটোই আরও বৃদ্ধি পাবে"।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, "প্রতিটি মানুষেরই একটা পরিকল্পনা থাকে এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। আমিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। আমার পরিকল্পনায় কুবিতে মাস্টার্স ছিল না, মূলত একারণেই মাস্টার্সে ভর্তি হইনি"।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের অধ্যাপক ড. মোঃ আমির উদ্দিন বলেন, "এই অনাগ্রহ শুধু কুবিতে না পুরো বাংলাদেশেই কমে যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর স্নাতকের পর চাকরি হয়ে যায় বা অনেকে বিদেশে স্নাতকোত্তর করতে আগ্রহী থাকে যেহেতু বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়াও আরেকটি সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণেও স্নাতকোত্তর করতে পারছে না। তবে এইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হুমকিস্বরুপ নয় কারণ ভার্সিটিতে অত্যধিক শিক্ষার্থী হয়ে যাচ্ছে। মান বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমানো হচ্ছে এবং উচ্চ শিক্ষাও সবার দরকার ছিলো না স্বাভাবিক কারণেই কমতে থাকবে এইখানে ভার্সিটির কোনো গাফিলতি ও নেই"।
উপ- উপচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, "মাস্টার্স করতে হবে আমাদের এইখানে বাধ্যতামূলক না। অনেকেই চাকরির জন্য বা বিদেশে পড়াশোনার জন্য মাস্টার্স করছে না। আমিও চাই আমাদের স্টুডেন্টরা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে যাক। আমাদের উন্নয়নশীল দেশে সব কিছু স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও আমাদের ভার্সিটিতে যতুটুকু সম্ভব সব সুযোগ সুবিধায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর করার জন্য"।
আমার বার্তা/জেএইচ

