প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও পূর্ণ সুবিধা পায়নি কুবির নারী শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
বুশরা আক্তার, কুবি প্রতিনিধি :

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও নারী শিক্ষার্থীরা এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত। আবাসন সংকট, পর্যাপ্ত পরিবহন না থাকা,মাতৃত্বকালীন ছুটি ও স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতি এসবের কারণে প্রতিদিন নারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি স্বীকার হতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু দুইটি ছাত্রী হল থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এক সিটে মেয়েদের ডাব্লিং করে থাকতে হচ্ছে। এতে ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি নিরাপত্তাহীনতাও বেড়েছে।
ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক সুবিধাগুলোরও ঘাটতি রয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত নামাজের জায়গা নেই, মায়েদের জন্য নেই কোনো ব্রেস্টফিডিং কর্নার বা বিশ্রামাগার। পাশাপাশি নেই আলাদা কমন রুম,আলাদা ওয়াশরুম কিংবা নারীদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীবান্ধব নীতির অভাব স্পষ্ট। মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্যানিটারি প্যাড কর্নার, নারী হেল্পডেস্কসহ মৌলিক নীতিগত সুবিধা এখনো চালু হয়নি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী কামরুন নেছা নুসরাত বলেন, " আমার সিজারিয়ান অপারেশনের মাত্র ১২ দিনের মাথায় আবার পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। তখন হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল। তবু পরীক্ষা দিতে হয়েছে উপস্থিতির কারণে। প্রসব-পরবর্তী সময়ের যন্ত্রণা, বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে ক্লাসে আসা—সব মিলিয়ে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ব্রেস্টফিডিং কর্নার নেই, যা অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিতে পারত। এসব কারণে অনেক মেয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ না করেই বিয়ে বা সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকে"।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ১৭ তম আবর্তন শিক্ষার্থী জারিন তাসলিম বলেন,"বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে পর্যাপ্ত লাইটিং এর ব্যবস্থা নেই, বিশেষ করে নজরুল ও বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন রাস্তাটিতে। এইদিকে মেয়েদের মেসগুলো রয়েছে, রাতের বেলা এইখান দিয়ে চলাচল করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই বহিরাগত ছেলেদের আনাগোনা থাকায় অন্ধকার রাস্তাটি দিয়ে চলাফেরা করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে"।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদা আক্তার মুক্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চাপ ও শারীরিক পরিবর্তনের কারণে গর্ভকালীন সময় শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর। বিশেষ করে সিজারিয়ান মায়ের ক্ষেত্রে অন্তত তিন মাসের বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই মা হওয়ার পর অন্তত তিন মাসের বিশেষ ছুটি থাকা উচিত, যাতে তারা শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে পড়াশোনায় ফিরতে পারেন।”
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ বলেন, "আমাদের দেশের বাস্তবতায় অনেক নারী শিক্ষার্থীরা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিয়ে করেন এবং সন্তান ধারন করেন। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ফিনল্যান্ড, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, দক্ষিন কোরিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি রয়েছে। আমাদের দেশে নারীরা বাচ্চার পরিচর্যা করার কারনে নিজের উচ্চশিক্ষা বা ক্যারিয়ার স্যক্রিফাইস করেন, যা নারীর ক্ষমতায়নে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই, পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত চাইল্ড কেয়ার বা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা যেতে পারে।"
আমার বার্তা/জেএইচ
