ঢাকার ১৮ কোটি টাকা খরচায় বসছে নতুন সংকেতবাতি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি মোড়ে নতুন করে সংকেতবাতি (ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি) বসানো হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব বাতি বসাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সংকেতবাতিগুলো তৈরি করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতেই সংকেতবাতি বসানো হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে ঢাকার একটি ট্রাফিক করিডরে (নির্ধারিত পথে) এগুলো বসছে। এই করিডরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) ১৪টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) ৮টি মোড় ও পয়েন্ট।
প্রাথমিকভাবে দুই সিটির দুটি করে চারটি মোড়ে সংকেতবাতি বসানো হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা উত্তরের কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এবং ঢাকা দক্ষিণের বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়। এর মধ্যে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল বাতি বসানোর কাজ প্রায় শেষ।
ঢাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নয়নে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের বেশকিছু পরামর্শ তুলা ধরা হয়। পরে গত ১৬ অক্টোবর বুয়েটে ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি সভা হয়। সেখানে নতুন করে সংকেতবাতি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কাজ হচ্ছে। আশা করছি ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কাজে দেবে। নগরবাসী এর সুফল পাবে।’
চার মোড়ে কাজ শুরু
প্রাথমিকভাবে দুই সিটির দুটি করে চারটি মোড়ে সংকেতবাতি বসানো হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা উত্তরের কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এবং ঢাকা দক্ষিণের বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়। এর মধ্যে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল বাতি বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ফার্মগেট মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে (টেস্টিং) চালানোও হচ্ছে সংকেতবাতি। বাংলামোটর মোড়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝিতে এগুলো চালু করার কথা।
স্বাভাবিক সময়ে সংকেতবাতি চালু ও বন্ধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর (টাইম সাইকেল) কোনো এক পাশের রাস্তায় যান চলার কিংবা থামার জন্য সবুজ ও লাল বাতি জ্বলবে বা নিভবে।
আধা-স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা
বুয়েটের তথ্য অনুযায়ী, সংকেতবাতি, কন্ট্রোলার (নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) সবই স্থানীয় বাজার থেকে পাওয়া উপকরণ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে। এ প্রযুক্তির সংকেতবাতি পরিচালিত হবে আধা-স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটেড) পদ্ধতিতে।
স্বাভাবিক সময়ে সংকেতবাতি চালু ও বন্ধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর (টাইম সাইকেল) কোনো এক পাশের রাস্তায় যান চলার কিংবা থামার জন্য সবুজ ও লাল বাতি জ্বলবে বা নিভবে।
সড়কের কোনো একপাশের যানবাহনের চাপ বুঝে প্রয়োজনে এই সংকেতবাতি সনাতন পদ্ধতিতেও (ম্যানুয়ালি) নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যানজট পরিস্থিতি বুঝে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা অপারেটরকে (পরিচালক) নির্দেশনা দেবেন। সে অনুযায়ী অপারেটর সবুজ-লাল বাতি জ্বালিয়ে কোনো একপাশের যানগুলোকে চলার বা থামার সংকেত দেবেন।
সংকেতবাতি চালুর পর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করবেন না। সংকেতবাতি মেনে চলতে হবে সব যানকে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা শুধু সংকেত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
সংকেবাতি সব রোগের ওষুধ নয়। এই বাতি কার্যকর হওয়ার কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুফল পাওয়া নিয়ে ‘সন্দেহ’
নতুন করে সংকেতবাতি স্থাপনের সুফল নগরবাসী কতটুকু পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ ঢাকার দুই সিটির প্রকৌশলীদের একটি অংশ। তাঁরা বলছেন, ব্যয় সংকোচনের দিক থেকে বুয়েটের পদ্ধতি ঠিক আছে। তবে কাজটি করা হচ্ছে অনেকটাই তাত্ত্বিকভাবে। সংকেতবাতির নিয়ন্ত্রণ রিলে পদ্ধতির (পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ), যা একেবারেই পুরোনো। যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কাও বেশি থাকছে।
ঢাকায় সড়কের সক্ষমতার চেয়ে ৫-৬ গুণ বেশি যান চলাচল করে। তাই ছোট যান নিয়ন্ত্রণ করে গণপরিবহনব্যবস্থাকে মেরুদণ্ড হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। তাহলেই এই সংকেতবাতি সড়কে শৃঙ্খলা ও যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারবে।
‘সংকেতবাতি সব রোগের ওষুধ নয়’
পরিবহনবিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংকেবাতি সব রোগের ওষুধ নয়। এই বাতি কার্যকর হওয়ার কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
ওই ছয় সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, মূল সড়কে রিকশার মতো ধীরগতির যানের চলাচল বন্ধ করা; মোড়ের ৫০-১০০ মিটারের মধ্যে যানবাহন থামতে বা পার্কিং করতে না দেওয়া; পুলিশের সাধারণ কার্যক্রম ৫ আগস্টের আগে যেমন ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রী ওঠা–নামা করতে না দেওয়া এবং ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক পর্যবেক্ষক দল গঠন করা।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘ঢাকায় সড়কের সক্ষমতার চেয়ে ৫-৬ গুণ বেশি যান চলাচল করে। তাই ছোট যান নিয়ন্ত্রণ করে গণপরিবহনব্যবস্থাকে মেরুদণ্ড হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। তাহলেই এই সংকেতবাতি সড়কে শৃঙ্খলা ও যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারবে।’
আমার বার্তা/এল/এমই