শাহবাগ-কাকরাইলে সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে নগরবাসী
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১৯:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ডিপ্লোমাকে ডিগ্রির মান দেওয়ার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে নার্সিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে কাকরাইলে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
ফলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সড়ক দুপুর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ। ব্যস্ততম দুই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এছাড়া দুপুরের পর ঢাকার আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টি যানজটের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে নগরবাসীকে।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। প্রায় একই সময়ে কাকরাইল মোড় অবরোধ করে সড়কে অবস্থান নেন জবি শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ ও কাকরাইল মোড় অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন, গুলিস্তান, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, নয়াপল্টন ও বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে অফিস শেষে বিভিন্ন সড়কে গাড়ির চাপ বাড়ায় বাসায় ফেরার পথে চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষেরা।
এসময় দীর্ঘক্ষণ সড়কে আটকে থাকতে দেখা যায় গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত যানবাহনগুলোকে। গণপরিবহনের যাত্রীদের অনেককে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতেও দেখা যায়।
মিডলাইন বাসের সহকারী ইমরুল কায়েস মিয়া বলেন, ‘প্রায় ৪০ মিনিট ধরে হাইকোর্টের মোড়ে একই জায়গায় বসে আছি। কোনো গাড়ি সামনে এগোচ্ছে না। সব গাড়ি এক জায়গায় থেমে গেছে।’
মোটরসাইকেল আরোহী হামিদুল ইসলাম জানান, মতিঝিল থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত আসতেই সময় লেগেছে ৪৫ মিনিট। যেখানে অন্যসময় লাগে ১৫ মিনিটেরও কম। সাধারণ মানুষ এ ভোগান্তির অবসান চায়।
পুলিশের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সিএনজি অটোরিকশাচালক শামীম ইসলাম বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই আন্দোলনে রাস্তা বন্ধ থাকছে। আমাদের মতো মানুষ যারা দিন আনি দিন খাই তাদের তাহলে কী অবস্থা হয়, একটু ভাবেন। আন্দোলনে রাস্তা বন্ধ থাকায় ইনকামও কমে গেছে। পুলিশের উচিত এসব আন্দোলন বন্ধ করে রাস্তা স্বাভাবিক রাখা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক-রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার ব্যস্ততম দুই পয়েন্ট শাহবাগ ও কাকরাইলে তিন-চার ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তাদের বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ সড়ক ছাড়ছেন না। আমরা পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রেখেছি।’
এর আগে, দুপুরের দিকে তিন দফা দাবিতে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে এগোনোর সময় কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে পৌঁছালে জবি শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা ব্যারিকেড ভাঙতে চাইলে তাদের ওপর লাঠিপেটা, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন। এছাড়া ঢাকা ট্রিবিউনের জবি প্রতিনিধি সোহান ফরাজি, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসানও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক মাহতাব লিমন, মেহেদীসহ অন্য শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে (সড়কে) অবস্থান করবো।
যমুনা অভিমুখী লং মার্চে পুলিশি বাধার বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি মাসুদুল আলম বলেন, পুলিশের ২০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। যমুনার সামনে যাওয়া বা সেখানে অবস্থান-সমাবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, কয়েকদিন আগেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনা ঘেরাও করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। উল্টো গরমে বিক্ষোভকারীদের স্বস্তি দিতে তাদের ওপর ঠান্ডা পানি স্প্রে করার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এদিকে, শাহবাগে আন্দোলনরত নার্সিং শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এদিন দাবি আদায়ে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা।
আমার বার্তা/এমই