কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট চিকিৎসায় শ্রবণশক্তি ফিরে পেল ৬ শিশু

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যাট চিকিৎসায় শ্রবণ শক্তি ফিরে পেল ছয় বধির শিশু।

সম্প্রতি সরকারি ব্যবস্থাপনায় নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন জেলার এই ছয় শিশুকে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যাট চিকিৎসা দেয়া হয়।

এক দশক আগেও দেশে বধিরতায় ভোগা মানুষের জন্য ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল না। অনেকে তখন বিদেশে গিয়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে এ চিকিৎসা নিতেন। এখন দেশেই ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় তা করা সম্ভব। তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নামমাত্র অর্থ দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ চিকিৎসার ফলে সম্পূর্ণ শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা জন্মগত মূক ও বধির শিশুরা এখন কানেও শুনবে, কথাও বলতে পারবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬, ২৭ ও ২৯ অক্টোবর ভোলা জেলার তিন বছর ১০ মাস বয়সী শিশু ওমর ফারুক, বরিশাল জেলার তিন বছর আট মাস বয়সের শিশু হাফিজা, কুষ্টিয়া জেলার তিন বছর ১০ মাস বয়সের আদিবা, বরিশাল জেলার চার বছর ৮ মাস বয়সের শিশু আলিফ খান, নওগাঁ জেলার চার বছর ৭ মাস বয়সী শিশু রিয়াজ হাসান ও মুন্সীগঞ্জ জেলার তিন বছর ১০ মাস বয়সের শাহেল ইসলাম এই ৬ জন জন্মগতভাবে বধির শিশুদের কানে ইমপ্ল্যান্ট অস্ত্রোপচার করা হয়। তারা ৬ জনই জন্মগতভাবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা জন্মগত মূক ও বধির। চিকিৎসাধীন শিশুরা এখন কানেও শুনবে, কথাও বলতে পারবে বলে জানা গেছে।

রোগীর স্বজনরা জানান, আমাদের মতো মানুষেরা এতো টাকা দিয়ে সন্তানদের চিকিৎসা করাতে পারতাম না। সরকারি ভাবে চিকিৎসা সেবা পেয়ে তারা খুশি। তাদের ছেলে-মেয়েরা এখন থেকে কথাও বলতে পারবে, কানেও শুনবে।

চিকিৎসকরা জানান, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা সম্পূর্ণ শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। এটা বায়োনিক কান নামেও পরিচিত। এটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়ায় স্থাপন করা হয়। এর দুটি অংশ। বাইরের অংশে মাইক্রোফোন, স্পিস প্রসেসর ও ট্রান্সমিটার কয়েল। ভেতরের অংশে থাকে রিসিভার স্টিমুলেটর ও ইলেকট্রেড।
 
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান (হেড-নেক সার্জারি) বিভাগের প্রকল্প পরিচালক (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যাট) অধ্যাপক ডা. নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট হচ্ছে একটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি। দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর কানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়ে এ চিকিৎসা করে থাকেন। ফরিদপুরে এই চিকিৎসাব্যবস্থা চালু হওয়ায় জন্ম থেকে কানে না শোনা এবং কথা বলতে না পারা শিশুদের চিকিৎসায় একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা. ইফতেখারুল আলম জানান, নাক কান গলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম ফয়সাল সিজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এটিএম সুমাইয়েফ-উর রহমানসহ (সৈকত) বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসকরা উপস্থিত থেকে এই চিকিৎসা সম্পন্ন করেছেন। আশা করি এ হাসপাতালের এটি একটি বড় অর্জন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার ৬০০ শিশু বধির হয়ে জন্ম নেয়।

আমার বার্তা/এল/এমই