রৌমারীতে শতশত কাকড়া ও ভেকু দিয়ে ফসলি জমি কাটার মহোৎসব

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩, ১০:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  মমিন উদ্দিন, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

  প্রিন্ট ভার্সন

সংগৃহীত

শতশত ড্রেজার, কাকড়া ও ভেকু দিয়ে ফসলি জমি কাটার মহোৎসব চলছে রৌমারী উপজেলা বন্দবেড় ইউনিয়নের পাখিউড়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজের মাত্র ৫০ হাত দুরে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রীজটি।

একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে একইভাবে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে। এ বিষয়ে নদ-নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারের ও উচ্চ আদালতের কড়া নির্দেশনা থাকলেও কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এক শ্রেণীর বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ড্রেজার, কাকড়া (ট্রাক্টর) ও ভেকু মেশিন দিয়ে ধুমধামে ফসলি জমি থেকে বালু ও মাটি কাটার মহোৎসব চলছে।

এসব নিয়ে প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসি বারবার অভিযোগ দিলেও কার্যকরি কোন ব্যবস্থ নিচ্ছেন না। তবে মাঝে মাঝে নাম মাত্র অভিযানও পরিচালনা করছে প্রশাসন। গত শনিবার বিকালের দিকে ধনারচর চরেরগ্রামের একটি বাড়ি ভিটা উচু করনের সময় ভেকুর মালিক সোলায়মানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সারোয়ার রাব্বী (ভারঃ)।

এতে ভেকুর মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলীর মধ্যস্থতায় ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেকু মালিক ও শ্রমিকরা অবৈধভাবে জরিমানা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে।

গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্র নদ, সোনাভরী, হলহলি, জিঞ্জিরামসহ ছোট নদীর তীব্র স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ে চরশৌলমারী, বন্দবেড়, রৌমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের খেরুয়ারচর, ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, বলদমারা, বাগুয়ারচর, পশ্চিম খনজনমারা, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, বাঘমারা, মিয়ারচর মুখতোলা, দিগলাপাড়া, ধনারচর, বকবান্দা, খেওয়ারচর, শ্মসানঘাট, আলগারচর বাগেরহাটসহ ২০ টি গ্রামের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।

দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বালু উত্তোলনের একটি চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুঘুমারী থেকে বলদমারা হয়ে ফলুয়ারচর নৌকাঘাট, কর্তিমারী নৌকাঘাট ও পাখিউড়া পযর্ন্ত প্রতিদিন অবৈধ ড্রেজার, কাকড়া ও ভেকুর মাধ্যমে মাটি ও বালু উত্তোলন করছেন।

উত্তোলনকৃত বালু ও দোয়াশ মাটি উপজেলার প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করেন। অপরদিকে অবৈধ ট্রাক্টর (কাকড়া) চলাচলে কাঁচা-পাঁকা রাস্তাগুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছাঁয়ায় জমজমাট ভাবে বালু ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে সচেতন মহল মনে করেন। 
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ধনারচর গ্রামের সামছুল আলম, লিয়াকত হোসেন, কুটিরচর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, বাগুয়ারচর গ্রামের আমজাদ হোসেনসহ অনেকেই জানান, ফলুয়ারচর নৌকা ঘাট থেকে ঘুঘুমারী নৌকাঘাট পর্যন্ত নদী থেকে যেভাবে ড্রেজার. কাকড়া (ট্রাক্টর) ও ভেকু দিয়ে বালু মাটি কাটা হচ্ছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু ব্যবসায়ী চক্রদের গ্রামবাসীরা বাধা দিলে তাদেরকেও নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এবিষয়ে আমি জানি এবং ড্রেজার, কাকড়া ও ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এবি/ওজি