এক বছরে দেশে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহনন
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অভিমান কিংবা অবহেলা। এমন হাজারো না বলা গল্প আর তীব্র হাহাকারের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন যার ৬১ শতাংশই নারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ধ্বংসাত্মক পথ থেকে তরুণ প্রজন্মকে ফেরাতে প্রয়োজন সহানুভূতি আর পারিবারিক সাহচর্য কিংবা সঠিক কাউন্সেলিং।
কখনো কখনো মনে হয় গোটা পৃথিবী যেন থমকে গেছে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়। যেন অনেকের মাঝে থেকেও গ্রাস করছে অসীম নিঃসঙ্গতা। কিন্তু না! জীবন এক গতিশীল নদী, যার পরতে পরতে হাজারো বাঁক থাকলেও থমকে যায় না কখনোই। আত্মহত্যা নামক নীরব মহামারি থেকে ফিরে সে কথাই জানালেন ৩০ বছর বয়সী এক যুবক।
তিনি বলেন, ব্রেকআপ করার পর আমার সার্কেল এমনকি আমার মা বললো মেয়েটা ভালো না। আমি ১২টা মাইলাম খাই। আমাকে ইবনে সিনায় ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার একটিই রাস্তা সেটি হচ্ছে পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, সঠিক মানুষ বাছাই করা। ভুল হতেই পারে, ইমোশন থেকে কিছু নেয়া যাবে না। তারপর বেরিয়ে আসতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে প্রাণ হারাচ্ছেন একজন।
গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নানা উদ্যোগের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা কিছুটা কমলেও সংখ্যাটা এখনও আশঙ্কাকে উতরাতে পারেনি। এমনকি সামাজিক হেনস্থার ভয়ে আত্মহত্যার অনেক ঘটনাই থেকে যায় অগোচরে।
আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, গত বছর দেশে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন যার ৬১ শতাংশই নারী। তবে এ সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম। ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
সামাজিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, একাকীত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অসচেতনতার কারণে তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী এবং নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে বলে মত মনোবিদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মেহ্জাবীন হক বলেন, সুইসাইডের দুটো প্রধান কারণ হচ্ছে ১. ডিপ্রেশন ২. লোনলিনেস। এখান থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসে।
আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করলেই গুরুত্ব দিয়ে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনার তাগিদ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্কুলে কি ঘটলো। তার যাওয়া-আসার পথে কি ঘটলো এগুলো নিয়ে বিচলিত থাকে, নিজের শরীরে আঘাত করে। এই ধরনের রোগী পরবর্তীতে আত্মহত্যা করে। এ ধরনের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অভিভাবকদের উচিত নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া।
তীব্র মানসিক যন্ত্রণা কিংবা ভেতরে জমে থাকা হতাশার পাহাড়কে ডিঙিয়ে সুন্দরের পথে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য্য, সেই সৌন্দর্য্যকে খুঁজে পেতে দুঃস্বপ্নকে ছাপিয়ে হাঁটতে হবে সুন্দর স্বপ্নের পথে।
আমার বার্তা/এল/এমই