বাজারে সবজি কম, ক্রেতা কম, দামও ‘কম’

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৫, ১১:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে। কমেছে সবজির সরবরাহ, কমেছে ক্রেতা, আর একই সঙ্গে কমেছে দামও। ঈদের আগের তুলনায় এখন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার (৯ জুন) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দোকানিরা তুলনামূলক কম পণ্য এনেছেন। অনেক দোকান এখনো বন্ধ। যেসব দোকান খোলা, সেগুলোতে সবজির সরবরাহ যেমন কম, তেমনই ক্রেতার উপস্থিতি কম। ফলে দোকানিরাও অনেকটাই অলস সময় পার করছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের লম্বা ছুটির কারণে ঢাকার অধিকাংশ মানুষ গ্রামের চলে গেছেন। আবার ঢাকায় যারা আছেন, প্রত্যেকার বাসায় কোরবানির মাংস। এ কারণে সবজির চাহিদা কম। আবার ঢাকায় সবজি আসছেও কম। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় দামও কমছে। ঈদের আগের দিনের তুলনায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা করে কমেছে।

তারা বলছেন, এই সপ্তাহের পুরোটাই ঈদের ছুটির মধ্যে যাবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকায় মানুষের সমাগম বাড়তে থাকবে। তখন সবজির চাহিদা ও সরবরাহ দুটোই বাড়বে। তখন দামও বাড়তে পারে, আবার আরও কমতেও পারে। এটা নির্ভর করবে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর।

ঈদের আগের দিন বেশিরভাগ বাজারে শসা বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি। কিছু কিছু বাজারে শসার কেজি ওঠে ১০০ টাকায়। এখন সেই শসা ২০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শসার মতো দাম কমেছে কাঁচ মরিচের। ঈদের আগের দিন ৩০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ টাকায়।

দাম কমার তালিকায় রয়েছে টমেটো ও লেবু। ঈদের আগের দিন ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৫০-৬০ টাকা কেজি। ১৫-২০ টাকা হালির লেবুর দাম কমে ১০ টাকায় নেমেছে।

পোটল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগের দিন বিভিন্ন বাজারে এই সবজিগুলোর কেজি ৮০ টাকায় উঠেছিলো। একই ভাবে দাম কমেছে কাকরোল, বরবটি, কচুর লতি, উস্তা, বেগুনের। এই সবজিগুলোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগের দিন এসব সবজির কেজি ছিল ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ঢ্যাঁড়স আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী মো. সাগর জাগো নিউজকে বলেন, এখন ঢাকায় মাল (সবজি) আসছে কম, ক্রেতাও কম। এ কারণে দামও কম। সব ধরনের সবজির দাম ঈদের আগের দিনের তুলনায় কমেছে। ঈদের আগের দিন টমেটো ও শসা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, আজকে টমেটো ৬০ টাকা আর শসা ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। একই ভাবে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা পোটল, করলা, বরবটি, ঝিঙা, বেগুন এখন ৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে।

তিনি বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ আরও কিছুদিন কম থাকবে। যারা ঢাকার বাইরে গেছেন, তারা ফিরবেন আগামী সপ্তাহ থেকে। গ্রামে যাওয়া মানুষগুলো ঢাকায় ফিরতে শুরু করলে সবজির চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে সরবরাহও বাড়বে। তখন দাম কমতেও পারে, আবার বাড়তেও পারে। সেটা নির্ভার করবে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর।

বাজারটির আরেক ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, এখন ঈদের ছুটি চলছে। এ কারণে ঢাকায় সবজি কম আসছে। যে সবজি আসছে, বিক্রি তার তুলনায় আরও অনেক কম। এ কারণে সরবরাহ কম থাকলেও সব ধরনের সবজির দামও এখন কম। আগামী এক-দুদিন দাম এমন কম থাকতে পারে। এরপর আবার বাড়তে পারে। কারণ, টানা কোরবানির মাংস খাওয়ার পর অনেকেই সবজি খেতে চাইবেন। তখন বাজারে সবজির চাহিদা বাড়বে। আর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিন্টু বলেন, এখন সবাই কোরবানির মাংস খাচ্ছে। এ কারণে সবজির চাহিদা কম। তাছাড়া ঈদের ছুটির কারণে ঢাকার অধিকাংশ মানুষ এখন গ্রামে। ফলে সবজি বিক্রি খুব কম হচ্ছে। আমাদের অনেকেই তো দোকান খুলেনি। বাজার আগামী সপ্তাহের আগে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী মো. খায়রুল বলেন, ঈদের আগের দিন শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজকে ৪০ টাকা বিক্রি করছি, তাও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ দাম ২০-৩০ টাকাও বলছে। এগুলো বাছাই করা ভালো মানের শসা, ২০-৩০ টাকা কেজি তো বিক্রি করা সম্ভব না। শসার মতো বাজারে সব সবজির দাম কমে গেছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই নেই। মাঝেমধ্যে দুই-একজন এসে এক-দুই পদের সবজি অল্প পরিমাণে কিনছেন।

এই ব্যবসায়ী বলেন, আড়তেও আজ সবজি কম এসেছে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীর সংখ্যাও আড়তে কম ছিল। এ কারণে আমরা কম দামে সবজি কিনতে পেরেছি। ফলে বিক্রি করতে পারছি কম দামে। এখন দাম কম হলেও দুদিন পর সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। কারণ, একটানা মাংস বেশি দিন খেতে কারও ভালো লাগে না। দুদিন পরই ঢাকায় যারা আছেন, তারা সবজি কিনতে ছুটবেন, তখন দাম বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।

এদিকে, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মুরগির দোকান বন্ধ দেখা গেছে। কিছু কিছু মুরগির দোকান খোলা থাকলেও বিক্রি কম। তবে মুরগির দামে পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির মতো দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ডিমের। ঈদের আগের দিনের মতো ডিমের ডজন ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।