টানা পতন থেকে বেরিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললেও নানান সংকটে নিমজ্জিত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড দরপতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় গত সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার শীর্ষ স্থানটিও দখল করেছে এই কোম্পানিটির শেয়ার।
গত সপ্তাহের লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম কমেছে ২০ পয়সা বা ১০ শতাংশ। এত এই চারদিনে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৮৮ হাজার ১১৯ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২ টাকা।
শেয়ার দামে এমন পতন হওয়া কোম্পানিটি লোকসানে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় ২০১৪ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তবে ২০১৪ ও ২০১৩ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১২ সালে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ, ২০১১ সালে ১০ শতংশ নগদ, ২০১০ সালে ৭৫ শতাশ নগদ, ২০০৯ সালে সাড়ে ৩৮ শতাংশ নগদ, ২০০৮ সালে ২০ শতাংশ নগদ ২০০৭ সালে ৩৫ শতাংশ নগদ, ২০০৬ সালে ৩০ শতাংশ নগদ এবং ২০০৫ সালে ৪৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানি।
অর্থাৎ এক সময় নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতো কোম্পানিটি। তবে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদার ব্যাপক লুটপাটের শিকার হওয়ার পর কোম্পানিটি নানা সংকটের মধ্যে পড়ে।
সংকটে পতিত হওয়ার পর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয় ডিএসই।
তার আগে পিপলস লিজিং বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে অনেক শেয়ারহোল্ডার পানির দরে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিতে চান। কিন্তু ক্রেতার অভাবে হতাশ হতে হয় তাদের। নামমাত্র দামে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও ক্রেতার অভাবে সে সময় শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি শেয়ারহোল্ডাররা।
টানা পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে কোম্পানিটির শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যের বদল হয়নি। শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হওয়ার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিলো ৩ টাকা। লেনদেন শুরুর পর কয়েকদিন টানা দাম বেড়ে ৫ টাকা ১০ পয়সায় উঠে। তবে এরপর থেকে আবার দরপতন চলছে। এখন ১ টাকা ৮০ পয়সা নেমে এসেছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।
শেয়ারের এমন দরপতন হওয়া কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত) শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৪৫ পয়সা লোকসান করেছে। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ২ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির লোকসানের পাল্লা আরও ভারি হয়েছে।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ আছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৭৬ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ আছে।
আমার বার্তা/এল/এমই