বেক্সিমকো গ্রুপের ৯৪ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সালমান এফ রহমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ ৭৯ জনের বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন বুধবার প্রকাশ: ৭ মে এ আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমান, তাঁর স্ত্রী সৈয়দ রুবাবা রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার হাসানের সব শেয়ার ও বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বেক্সিমকোর যে ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেড, বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক, বেক্সিমকো মিডিয়া লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিক লিমিটেড, বেক্সিমকো রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বেক্সিমকো কেমিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ট্রেডিং লিমিটেড, বেক্সিমকো প্রপার্টিজ লিমিটেড, বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিংস লিমিটেড, বেক্সিমকো ইনফরমেশন টেকনোলজি লিমিটেড, বেক্সিমকো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, বেক্সিমকো গ্লোবাল লজিস্টিকস লিমিটেড, বেক্সিমকো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেড, বেক্সিমকো এভিয়েশন লিমিটেড, বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো অ্যাগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো অ্যাস্ট্রো কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেড, বেক্সিমকো লজিস্টিকস লিমিটেড, বেক্সিমকো মাইনিং অ্যান্ড এনার্জি কর্পোরেশন লিমিটেড।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৭২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
দুদকের পক্ষ থেকে আজ আদালতকে জানানো হয়েছে, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা এসব ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অবরুদ্ধের আদেশ হওয়া ৩৭২টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে সালমান এফ রহমানের ৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আর তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নামে দুটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বাকিগুলো তাঁর পরিবার ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
গত ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্রোক করা এসব সম্পদের বেশির ভাগই রয়েছে ঢাকার দোহারে।
সিআইডি বলছে, রপ্তানি–বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ১৭টি মামলা করে সিআইডির আর্থিক দুর্নীতি দমন বিভাগ ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এসব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে শায়ান ফজলুর রহমানসহ অন্যদের নামে দোহারে প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমি, জমিতে নির্মিত স্থাপনা ও রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পায়।
এরপর ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ অন্য আসামিদের নামে থাকা সম্পদের বিবরণ আদালতে তুলে ধরে ক্রোকের আবেদন করে সিআইডি। আদালত সেদিনই এসব সম্পদ ক্রোক করার আবেদন মঞ্জুর করেন। অপরাধ তদন্ত সংস্থাটি বলছে, ক্রোক করা এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য ২৫০ কোটি টাকা।
মামলাগুলোয় সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতি না নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং ও আর আর হোল্ডিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠান গড়েন তাঁরা।
বেক্সিমকো গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ২,০৯৫ কোটি টাকা। এর আগে, বেক্সিমকো গ্রুপের স্বনামে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৩,০৪২ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২,৯২৫ কোটি টাকা। তবে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে ৩১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরও বিস্তারিতভাবে, বেক্সিমকো গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২,০৯৫ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের একটি অংশ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
বেক্সিমকো গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২,০৯৫ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের একটি অংশ। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২,০৯৫ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের একটি অংশ। এই খেলাপি ঋণ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছে।
আলোচিত শিল্পগ্রুপ বেক্সিমকোর ব্যাংক ঋণ
২৭ মে পর্যন্ত তদন্তে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের স্বনামে ঋণ পাওয়া গেছে ৫৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা। মোট ২৪টি ব্যাংক থেকে তিনি এসব ঋণ গ্রহণ করেছেন।
এই ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক থেকে ৪৭ শতাংশ ও সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে ২০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠিয়েছে। বাকি ঋণও খেলাপিযোগ্য। অনেক ঋণের বিপরীতে জামানত নেই বলে ব্যাংকগুলো খেলাপি করেছে। কিন্তু সে তথ্য এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়নি।
কারণ গ্রাহকের ব্যবসা সচল রাখতে নতুন ঋণ দিয়ে কিছু খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে। এর আগে বেক্সিমকোর ৫৩ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বেক্সিমকো গ্রুপের বেনামে আরও ঋণ রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এক ডজনের বেশি ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলেছে বেক্সিমকো
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী বেক্সিমকো শীর্ষ খেলাপির তকমা নিয়ে এখন বহুল আলোচিত-সমালোচিত। এই দুই গ্রুপের কারণে অন্তত এক ডজন ঋণদাতা ব্যাংক সংকটে পড়েছে, যা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে তালিকার শীর্ষে ছিল।
ব্যাংকাররা জানান, বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেক্সিমকো মোট ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যার মধ্যে আট ব্যাংকের কাছে ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বেক্সিমকোর খেলাপির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে জনতা ও সোনালী ব্যাংক। অন্যদিকে, এস আলমের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা এবং তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এখন কারাগারে। তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। দায়, দেনা, ঋণ ও মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো দেখাশোনার জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ করতে নির্দেশনা জারি করেছে আদালত।
আমার বার্তা/এমই