সার আমদানিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশে যখন সারের সংকট চলছে, ঠিক সে সময় এক ব্যক্তির একাধিক কোম্পানিকে সার আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই অসাধু কার্যক্রমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছে মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি অস্বীকার করে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি অর্থ লোপাটের এক ধরনের অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। বেসরকারি মাধ্যমে সার আমদানি করতে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা যোগসাজশ আমদানি দরপত্র বিপরীতে মনগড়া নিয়মে একক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়। সে ক্ষেত্রে দরপত্র নিয়মনীতি উপেক্ষা করা হয়েছে।
সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী প্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে দরপত্র প্রাপ্ত দরের বাইরে ‘নেগোসিয়েশন’ এর মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পায়নি।
এদিকে, এসব নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার পরিপেক্ষিতে গণমাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। যেখানে ‘সার আমদানিতে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানান, সরকার যে প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ দিয়েছে তাতে প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে টনপ্রতি ২০-১৫০ ডলার পর্যন্ত সরকার ব্যয় কমিয়ে আনতে পেরেছে। আমদানি নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও দৈনিক পত্রিকায় ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিনব উদ্যোগ’ বা ‘সার আমদানিতে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ’ প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত পোস্ট/ প্রতিবেদনগুলোর প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো মতামত/সংবাদের বিষয়বস্তু ভিত্তিহীন, মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য তথ্য সম্বলিত। প্রকাশিত পোস্ট/ প্রতিবেদনগুলো ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার বলে মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পোস্ট/ প্রতিবেদনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এ পদ্ধতি অনুসরণ করে নন-ইউরিয়া সারের আমদানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওই পদ্ধতিতে প্রতি ধাপের টেন্ডারে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ (কম বেশী ৩০,০০০ মে.টন) সারের জন্য দরপ্রস্তাব দাখিল করতে হয়। সরকারের সার-ভিত্তিক আমদানি চাহিদা ওই সিলিংয়ের চেয়ে অনেক বেশী হওয়ায় ওই পদ্ধতি অনুযায়ী দর প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারীরা একই দেশের একই সারের জন্য দাখিল করা দরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দরের পাশাপাশি দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রভৃতি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে টনপ্রতি ২০ মার্কিন ডলার থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশী ব্যবধানে সার সরবরাহের সুযোগ তৈরি হতো।
এতে সরকার বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটতো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর, নির্দিষ্ট সারের জন্য নির্দিষ্ট দেশের আমদানিকারকরা প্রদত্ত সমুদয় দরের মধ্যে কেবল সর্বনিম্ন দরে সার সরবরাহে সম্মতি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রয়াদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর করা হয়। ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয় এবং আমদানিকারকদেরও অসম লাভের পথ সংকুচিত হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই সাড়ে ৯ লাখ টন সার আমদানি একটি টেন্ডার আহ্বান করে মন্ত্রণালয়। এ টেন্ডারের মাধ্যমে ৫ লাখ ১৫ লাখ টন টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি আমদানি কার্যাদেশ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। বাকি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টনের আমদানি জন্য পুনরায় টেন্ডার করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই ৫ লাখ ১৫ হাজার মে টন নন ইউরিয়া সার আমদানি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান এবং ওই ব্যক্তির আত্মীয়র এক প্রতিষ্ঠানের নামেই মোট ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যক্তিকে যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে সেখানেও বিশেষ সুবিধা দিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, বড় কার্যাদেশ পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান হলো দেশ ট্রেডিং করপোরেশন এবং বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। দুটি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী হলেন আমিনুর রশিদ খান। অন্য একটি কোম্পানি হলো এনআরকে হোল্ডিং যার স্বত্বাধিকারী নায়েব রশিদ খান। নায়েব রশিদ খান আবার আমিনুর রশিদ খানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে পরিচিত। এ প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশটি আমিনুর রশিদ খানই নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
২০২৪ জুলাইয়ে পট পরিবর্তনের পর থেকেই মামুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে।
আমার বার্তা/এল/এমই