দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও এবার একীভূত হবে

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

মাত্র তিন গ্রাহকের কাছে আটকে আছে জনতা ব্যাংকের ৪০ হাজার কোটি টাকা। এভাবে শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের কাছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা আটকে থাকায় এখন নাজুক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকখাত। পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে সবল ব্যাংকের সঙ্গে নয়, বরং দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ে আলাদা ব্যাংক করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

জনতা ব্যাংক যেনো আর জনতার নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়ায় গত এক বছরে আমানতকারীরা বেড়েছে জনতা ব্যাংকে। তবে ফেরেনি ঋণের আকারে দেয়া আমানতকারীদের ৫৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। সেখানে এননটেক্স, বেক্সিমকো ও এস আলমের কাছে আটকে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
 
সর্বশেষ তথ্য বলছে, ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ ১২০ খেলাপির কাছে আটকে আছে ৮৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। জনতা ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। রূপালীর ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি। সোনালী ব্যাংক পাবে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি এবং বিডিবিএলের ৫০০ কোটি টাকা। ৫ আগস্টের পর অনেক খেলাপি এখন অদৃশ্য অথবা পলাতক। ফলে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির ঋণ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একীভূত করার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ের টেবিলে।
 
সুপারিশে বলা হয়, ‘সোনালী ব্যাংকের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো হওয়ায় দুর্বল কোন ব্যাংককে একীভূত করা যেতে পারে। কারণ সোনালী ব্যাংকের তারল্য যথেষ্ট রয়েছে এবং এতে কোনো বাড়তি খরচ হবে না।’
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, যদি ব্যাংকগুলো মনে করে কোনোভাবেই ওই ঋণ আদায় করা সম্ভব না, তাহলে অপশন আছে - খেলাপিদের জামানত আইনের মাধ্যমে বিক্রি করে তারল্যে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে গত এক বছরে ইসলামী ব্যাংকসহ ৬ টি দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। মূলধন ঘাটতি ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। খেলাপি ঋণও কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যাংকটির। এমন অবস্থায় দুর্বল ব্যাংকের চাপ নড়বড়ে করবে প্রতিটি সূচকে।
 
সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিইও ও এমডি মো. শওকত আলী খান বলেন, ‘অন্যান্য ব্যাংকের যেসব ঋণ যেটা যাচাই-বাছাই না করে দেয়া হয়েছে, তা আদায় করা বেশ কষ্টসাধ্য। এই ঋণগুলো আদায়ের দায়িত্ব যদি সোনালী ব্যাংকের ওপর আসে, তাহলে এটি ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে এবং বর্তমান সম্পদের মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, সহজ সমাধানে নয়, ঢালাও ব্যাংক মার্জার দ্বীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ ফেলবে অর্থনীতিতেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল আমিন জানান, জনতা ব্যাংক যে ঋণ ছাড় করেছে, তার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এনপিএল (অপ্রদেয় ঋণ)। কিছু ক্ষেত্রে কয়েকজন ব্যক্তির হাতে অযাচিতভাবে টাকা চলে গেছে। তাই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কোনো স্কিম নিলে তাতে সাময়িকভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও সেগুলোকে টেকসইভাবে শক্তিশালী করতে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো একটি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখন টাকার সহায়তা করা হবে না-এটিই একমাত্র সুবিধা। কিন্তু এর বড় অসুবিধাও আছে: জনগণের ওই ভালো ব্যাংকের প্রতি যে আস্থা ছিল, তা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
এছাড়া ব্যাংকগুলো ফেরানোর পরিকল্পনা ছাড়াও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখা ও সুশাসন নিশ্চিতেও জোর দেয়ার পরামর্শ আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের।

আমার বার্তা/এল/এমই