অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার, কেজিপ্রতি দাম ছাড়াল ১০০ টাকা

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার ঘর ছাড়িয়েছে। গত দুদিনেই প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। এখন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, যা তিনদিন আগেও ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

পাইকারি বাজারেও একই চিত্র। মানভেদে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে, যা গত শুক্র-শনিবারও বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকায়।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

কুমিল্লা আড়তের আড়তদার আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘পাবনা ও ফরিদপুরের আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সারাদেশের পাইকারি বাজারে। আগের চেয়ে মোকামে দাম প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে, তা যথেষ্ট নয়।’

চট্টগ্রামেও একই চিত্র

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারেও তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। সোমবার (৩ নভেম্বর) দেখা যায়, মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০৫ টাকায়, যা গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিক্রি হয়েছিল ৭২ থেকে ৮৫ টাকায়।

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া গণমাধ্যমে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’

মৌসুমি প্রভাব ও আমদানি সংকট

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, দেশে রবি মৌসুমের রোপণ শুরু হয়েছে দেরিতে, ফলে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে। পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো রোপণ শেষ হয়নি। সময়মতো আমদানি অনুমোদন না পেলে বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অন্যদিকে কৃষি অধিদপ্তর বলছে, দেশে এখনো পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত আছে। এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যবসায়ী কারসাজি। কৃষকের হাতে এখনো পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আছে, তাই আগামী দুই মাস কোনো সংকট হবে না।’

তিনি জানান, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে, আর ডিসেম্বরের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজও উঠতে শুরু করবে। ফলে দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

কারসাজি ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ

বাজারে হঠাৎ দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা বলছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আমরা এখন ৭৭-৮০ টাকায় কিনে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করছি। গত বছরের এই সময়ে দাম ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। সে তুলনায় এবার অনেক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে।’

ক্যাবের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা চলছে। আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

আমদানি অনুমতির জট

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ লাখ টন, আর গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টন। তারপরও ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানির জন্য মরিয়া।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ে জমা পড়েছে দুই হাজার ৮০০-এর বেশি আমদানি অনুমতির (আইপি) আবেদন। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি।

অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান গণমাধ্যমে বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিলে আমরা আইপি দিতে পারি না। সব আবেদন ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নভেম্বরেই বাজারে আসবে। এখন আমদানির অনুমতি দিলে কৃষক বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’

তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মৌসুমে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকে আগেই বিক্রি করে ফেলেছেন। ফলে এখন মজুতদারদের হাতে থাকা পেঁয়াজ নিয়েই বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে দাম বাড়াচ্ছে।

দেশে এখন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও আমদানি স্থগিত ও মৌসুমি প্রভাবের কারণে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও ততদিন পর্যন্ত দামের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।


আমার বার্তা/এমই