
দেশে টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পেঁয়াজের দাম। মাত্র ১০ দিন আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। তবে ২ নভেম্বর থেকে দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে, কয়েক দিনের মধ্যেই কেজিপ্রতি দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছায় দেশের বিভিন্ন বাজারে।
সরকারি ঘোষণা ও হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এখনো বাজারে তেমন পরিবর্তন আসেনি। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে—ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০–১১৫ টাকায়, আর বাছাইকৃত বড় পেঁয়াজ ১২০–১৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরাতেও তার প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিমত
ধলপুর বাজারের আকলিমা জেনারেল স্টোরের মালিক রমজান আলী বলেন, “শ্যামবাজার থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ আনতে হচ্ছে অনেক দামে। তাই খুচরায় দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে বলে মনে হয় না। তবে ভারতের পেঁয়াজ এলে দাম কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।”
শ্যামবাজারের পাইকাররা জানান, গতকালের তুলনায় আজ মানভেদে কেজিপ্রতি ৫–১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ছোট পেঁয়াজ ১০০–১০৫ টাকায়, আর বড় পেঁয়াজ ১০৫–১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, পেঁয়াজের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কয়েকটি কারণে ঘটছে:
উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত ধাপে ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য
সংরক্ষণ সুবিধার অভাব
মৌসুমের শেষ পর্যায়ে সরবরাহ কমে যাওয়া
সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে ফসলের ক্ষতি
আমদানি বন্ধ থাকা
প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগ পর্যন্ত দামে এমন অস্থিরতা দেখা যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরাও কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের অবস্থান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবুও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।
বর্তমানে দেশে আগের মৌসুমের প্রায় ৩.৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি মাসেই ১ লাখ টন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে এবং পরের মাসে আরও ২ লাখ টন যোগ হবে। তাই প্রকৃতপক্ষে দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই।
ভারতে পাইকারি দরে পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৮ রুপি (১২ টাকা)। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি করলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আপাতত পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে দাম না কমলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
গত ৯ নভেম্বর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন,
“চলতি সপ্তাহের মধ্যে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক হলে আর অনুমতি দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ে ২,৮০০ জন আমদানিকারকের আবেদন রয়েছে। তাদের ১০ শতাংশকেও অনুমতি দিলে বাজারে দাম ধস নেমে যাবে, যা সরকার চায় না।
বিটিটিসির সুপারিশ
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। বর্তমানে দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম যেখানে ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে, সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশে তা মাত্র ৩০ টাকার মতো।
কমিশন মনে করে, সীমিত পরিমাণে আমদানি অনুমোদন দিলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে।
বাজারে সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও মজুতদারি ও কৃত্রিম সংকটই এখন পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত বছরের শেষ প্রান্তিকের এই সময়টাকে সামনে রেখে স্থায়ী সমাধান পরিকল্পনা তৈরি করা—যাতে প্রতি বছর একই পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি না হয়।
আমার বার্তা/জেএইচ

