মাসের পর মাস বেনাপোলে আটকা শতাধিকের বেশি সুপারির ট্রাক

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বেনাপোল বন্দরে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের শতাধিকের বেশি রফতানিমুখী সুপারির ট্রাক। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টিতে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এদিকে আটকে থাকা সুপারীর ট্রাক প্রতি দিনে ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড গুণতে হচ্ছে রফতানিকারকদের। সংকট কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

জানা যায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যে সব পণ্য রফতানি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুপারি। সুপারি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশ। গুণগত মান ভাল হওয়ায় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশ চাহিদা রয়েছে সুপারির। তথ্য বলছে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারি রফতানি হয় ভারতে। তবে গত ৫  আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর রফতানি বাণিজ্যে আসে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নানান শর্ত আরোপ। এতে বর্তমানে রফতানির পরিমাণ কমে নেমেছে ৩০ শতাংশে।
 
সুপারি রফতানিকে ওপারে মান পরীক্ষায় ধীরগতিসহ কৃত্রিম সমস্যা তৈরিতে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় ২ মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক রফতানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরে দির্ঘদিন আটকে থেকে নানান সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে ট্রাক চালকদের। বন্দরেও দেখা দিয়েছে পণ্যজট।
 
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের সুপারি আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। এর ফলে, ভারতের মোট সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে।
 
সুপারিবাহী ট্রাক চালক মমিন জানান, ১ মাস ২৭ দিন ধরে তিনি বন্দরে আটকে থেকে নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।  তার মতো আরো দেড় শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারীর বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
 
রফতানিকারক পণ্য ছাড়কারী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান আওলিয়া এন্টার প্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম জানান, ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পরীক্ষণসহ নানান কারণ দেখিয়ে তারা পণ্য নিতে দেরি করছে। তবে দ্রুত যাতে এসব পণ্য খালাস হয় চেষ্টা চলছে।
 
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান,  বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা দুই দেশের জন্য ক্ষতি। এ অবস্থা কাটাতে দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পরিবর্তনের পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, আসবাবপত্র, ফলের জুসসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পণ্য সড়ক পথে রফতানি বন্ধ রয়েছে।
 
বেনাপোল বন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আবু তালহা  জানান, ভারতে প্রচুর সুপারি রফতানি হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হয়েছে ১০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন সুপারি। যে সব সুপারির ট্রাক বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে তার কাগজ হাতে পেলে দ্রুত ছাড়করণে সহযোগিতা করবেন। যে সমস্যার কারণে বন্দরে সব ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে শুনেছি সেটা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে যে সব ট্রাকের কাগজ পত্র তাদের কাছে আসছে সেটা ভারতে ঢুকছে।

আমার বার্তা/এল/এমই