উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁটে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমেছে, কমেছে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের হার। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি ও বেসরকারি-দুইদিকেই বিনিয়োগ কমার এই প্রবণতা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান সংকটকে তীব্র করবে; বাড়াবে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর একের পর এক ‘অপ্রয়োজনীয় ও লুটপাটের প্রকল্প’ বাতিল করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সর্বশেষ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটির ভবিষ্যৎও ছেড়ে দেয়া হয়েছে আগামী সরকারের ওপর।
গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারের ব্যাখ্যা, চলমান প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে নতুন কোনো বড় বা মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি। তবে বছরের শেষভাগে দেখা যায়, উন্নয়ন ব্যয় পূরণে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাতেও ধরা যায়নি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি।
অন্যদিকে, ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকার এখন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিবর্তে নন-ব্যাংকিং খাতের ওপরই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন-এই ছয় মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৮৬ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণগ্রহণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ আগের ছয় মাসের তুলনায় ঋণ নেয়ার হার কমেছে প্রায় ৬৪ শতাংশ, যা নেমে এসেছে মাত্র ৩৬ শতাংশে।
একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগও নিম্নমুখী। কারণ সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের ‘কনফিডেন্স’ জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার যখন অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করে, তখন সেই কার্যক্রমে বেসরকারি খাতও সম্পৃক্ত হয়। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ে। তবে গত প্রায় ছয় মাসে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমেছে।’
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে এই ‘হাতটান’ ভবিষ্যতে বেকারত্বের হার বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপও আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ বলেন, ‘নতুন কোনো প্রকল্প শুরু হয়নি। বিদ্যমান অনেক প্রকল্পও প্রায় স্থবির হয়ে আছে। কোথাও কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কোথাও কর্মী ছাঁটাই হয়েছে; আবার অনেক জায়গায় বেতন কমানো বা বেতন দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে মানুষের হাতে অর্থ কম যাচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতাও কমছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।’
এদিকে, কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে থাকায় সরকারের তহবিল ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সব খাত মিলিয়ে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা অর্থসংস্থান করেছে। গত বছরের একই সময় ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই অঙ্ক ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।
আমার বার্তা/এল/এমই
