মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে সবজির বাজার, কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে বঞ্চিত কৃষক

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

শহরের গোশালা বাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার হাড়িভাঙ্গা, সদর উপজেলার বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে খুচরা দোকানে প্রতিকেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায়। ফলে কৃষকের মাঠ থেকে বাজার পর্যন্ত দামে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে।

দামের পার্থক্য প্রসঙ্গে জেলা সদরের বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী মজিদুল মিয়া বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহের সময় দাম একরকম থাকলেও আড়তে আসার পর তা পরিবর্তিত হয়। 

আড়তের আরেক পাইকার হক সাহেব জানান, আজ আড়তে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ফুলকপি ১৪ থেকে ১৬ টাকায় কেনা হয়েছে। মাঠ থেকে আড়ত হয়ে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে সবজি তিন থেকে চারবার হাতবদল হয়। এতে একাধিক মধ্যস্বত্বভোগী ও পরিবহন খরচ যুক্ত হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়।

সবজির দামে মাঠ ও বাজারের বড় ব্যবধান নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ বাড়ছে। আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাঠ থেকে পাইকাররা খুব কম দামে সবজি কিনে নিয়ে বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে, ফলে প্রকৃত উৎপাদকের লাভ পাইকারদের হাতেই চলে যাচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, মাঠপর্যায়ে কার্যকর তদারকি না থাকায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ফড়িয়ারা কম দামে সবজি কিনে নেয়, আর আড়তে বিক্রি করতে গেলে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ যোগ হওয়ায় কৃষকের লাভ আরও কমে যায়।

এদিকে সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বিক্রি করছেন। কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় লোকসান দিয়েই সবজি ছাড়তে হচ্ছে। জেলা সদরের বড়বাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে জেলা শহরের গোশালা বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামের ব্যবধান নিয়ে ভোক্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা আফজাল আলী ও নুরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এটি কোনো বড় শহর নয়, এটি একটি সবজি উৎপাদনকারী জেলা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ করা হয়। সাধারণত এই সময়ে ১০ থেকে ২০ টাকায় বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যেত। এখানে যদি এমন দাম হয়, তাহলে বড় শহরগুলোর পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আলু বাদে প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ আবাদ আরও বাড়বে। পাশাপাশি নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মাঠ ও বাজারের দামের ব্যবধান কমাতে সরকারি তদারকি জোরদার, মধ্যস্বত্বভোগী নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে সরাসরি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সংরক্ষণাগার ও পরিবহন সুবিধা বাড়ালে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং ভোক্তারাও উপকৃত হবেন।

আমার বার্তা/এল/এমই