মাদ্রাসাগুলোর নতুন করে পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশজুড়ে বেসরকারি মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাড়ছে। এমনকি শর্ত পূরণ না করতে পারা মাদ্রাসাকেও শর্ত শিথিল করে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্তর অনুমোদন বাতিল ও স্থগিত করা মাদ্রাসাগুলোর বিভিন্ন স্তরের পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে নতুন করে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিমালা সংশোধন করে এই সুযোগ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ জারির পর এ সুযোগ পাচ্ছে মাদ্রাসাগুলো। ফলে যেসব মাদ্রাসা আগে অনুমোদন পায়নি, তারা এখন অনুমোদন পাচ্ছে এবং ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাও অনুমোদন পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব মাদ্রাসা শর্ত পূরণ করতে না পারায় আগে অনুমোদন পায়নি, সেসব মাদ্রাসার জন্য নতুন করে আদেশ জারি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় ২০২৩ ও ২০২৪ সালের আটকে যাওয়া আদেশগুলোও এখন জারি করা হচ্ছে নতুন করে। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের ছবি সংবলিত প্যাডে আদেশগুলো জারি করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের গত ১ অক্টোবরের একটি আদেশে ১১টি দাখিল মাদ্রাসাকে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শর্ত পূরণ না করায় তিনটি দাখিল মাদ্রাসার অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল হয় চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা একটি আদেশে। পরে বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে ওই মাদ্রাসাগুলোকে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবরে জারি করা অপর আদেশে আলিম স্তরে পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর! চলতি বছরের একই দিনে জারি করা অপর আদেশে ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে সই রয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। চলতি বছরের অপর আরও একটি আদেশে একটি মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদেশে সই করা আছে ৩১ অক্টোবর।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা আলাদা আদেশে আরও ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফুলতলী দাখিল মাদ্রাসার শর্ত শিথিল করে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অখণ্ড ৬০ শতাংশ জমির পরিবর্তে এই মাদ্রাসার রয়েছে ৫৪ শতাংশ অখণ্ড জমি। জমির অখণ্ডতা পূরণের শর্ত দিয়ে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের ঝাউবোনা মহিলা মাদ্রাসাকেও একই শর্তে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট জারি করা আরও একটি আদেশে পাবনা ও টাঙ্গাইলের দুটি মাদ্রাসার বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এসব অফিস আদেশে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদেশগুলো সই করেছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (মাদ্রাসা-২) একেএম লুৎফর রহমান। বর্তমানে তিনি এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নেই। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লেখ করেন, লুৎফর রহমান বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে নেই। তিনি আগেই বদলি হয়েছেন অন্য মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে চলতি বছরের ১৯ মার্চ জারি করা একটি আদেশে সাতটি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অফিস আদেশে তারিখ দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব একেএম লুৎফর রহমান।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে সিলেটের বিশ্বনাথ ও ভোলার চরফ্যাশন দাখিল মাদ্রাসায় আলিম স্তরের পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারি সই করা। একই কর্মকর্তা অফিস আদেশে সই করেছেন।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দাখিল মাদ্রাসা দুটির অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এসএম মাসুদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটি (আদেশ) টিএমইডি (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) থেকে করেছে। টিএমইডি এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠায়, জনপ্রশাসনে পাঠায়, এটার প্রক্রিয়া হতে সময় লাগে। এক বছর আগে শুরু হয়েছিল। একেএম লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরে অনুমোদন দিতে দেরি করেছে। এ জন্য এখন করা হয়েছে (আদেশ জারি)।
এদিকে, ২০২২ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব পায় দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে চলমান আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব ছিল মন্ত্রণালয়ের হাতেই। নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডগুলো দায়িত্ব পায়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ‘বেসরকারি উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) স্থাপন, চালুকরণ ও স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা, ১৯৯৭’ সংশোধন করে নতুন করে ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ সম্প্রতি নতুন নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
এই নীতিমালার আওতায় ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো অনুমোদনের স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। নীতিমালা জারির পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে সম্প্রতি বলেছিলেন, প্রাইভেট অনেক মাদ্রাসা আছে, যারা অন্য মাদ্রাসার (অনুমোদিত) নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা স্বনামে পরীক্ষা দিতে পারবে (অনুমোদন পাওয়ার পর)। যেহেতু তারা কন্ট্রিবিউট করেছে, সেখানে সরকারের আর্থিক ব্যয় নেই। অথচ তারা ভালো পারফর্ম করছে, সে জন্য দেওয়া।
শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসা
নতুন করে শর্ত শিথিল করে বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। ফলে নতুন করে স্বীকৃতি পাওয়া এবং ভাড়াবাড়িতে গড়ে ওঠা মাদ্রাসাও এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে।
দাখিল আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসাগুলোর এমপিও নীতিমালা ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।
এমপিও পেতে নীতিমালা শিথিলের বিষয়ে বলেন, ২০১৮ সালের নীতিমালায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য জমির পরিমাণ ছিল ৩৩ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমপিও পেতে আগে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। এখন ন্যূনতম ১২৫ জন করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই
