নয় মাসে ৬৮ বার গুজবের শিকার হয়েছেন ২৯ নারী তারকা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশে নারীদের ঘিরে অপতথ্য ছড়ানো এখন একটি উদ্বেগজনক সামাজিক ও ডিজিটাল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ৯ মাসে যত গুজব শনাক্ত হয়েছে তার অন্তত ২১ শতাংশ নারীদের ঘিরে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২৭৬ জন নারীকে জড়িয়ে ৫৬৭টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব অপতথ্যের শিকার হয়েছেন রাজনীতি, বিনোদন, জাতীয়সহ বিভিন্ন অঙ্গনের পরিচিত ব্যক্তিরা। এমনকি সাধারণ অনেক নারীও নিয়মিত এমন অপতথ্যের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া তথ্য বা অপতথ্যের অন্যতম বড় শিকার হয়ে উঠছেন বিনোদন জগতের নারীরা। অভিনেত্রী, মডেল, উপস্থাপক ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নাম-পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য। এর মধ্যে রয়েছে ভুয়া ভিডিও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কনটেন্ট কিংবা মৃত্যুর গুজব।
বাঁ থেকে শাওন, মিম, ফারিণ, মেহজাবীন ও তটিনী
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিনোদন জগতের ২৯ জন নারী তারকাকে জড়িয়ে অন্তত ৬৮টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ৫০টি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এআই বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। এই তারকাদের মধ্যে আছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহের আফরোজ শাওন, আজমেরী হক বাঁধন, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, বিদ্যা সিনহা সাহা মিম, তাসনিয়া ফারিণ, মাহিয়া মাহি, শবনম বুবলী, অপু বিশ্বাস, পরীমনি, নাজনীন নাহার নিহা, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, মেহজাবীন চৌধুরী ও শবনম ফারিয়া।
ভুয়া এসব কনটেন্টের ক্ষেত্রে ৩৬টি ঘটনাতেই ব্যবহার হয়েছে ভারতীয় নারীর ফুটেজ, যেগুলোকে বাংলাদেশের বিনোদন তারকার ছবি বা ভিডিও দাবি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিনোদন জগতে গেল নয় মাসে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। তাকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১১টি ভুয়া কনটেন্টের ১০টিই ছিল এআই কেন্দ্রিক। সাদিয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে অবগত। রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, যারা এই কাজটা করছে তারা ভয়াবহ ক্রাইমই করছে।
ভুয়া কনটেন্টগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাদিয়া আয়মান মনে করেন এককভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে এই সমস্যায় যারা পড়ছেন তারা সকলে একজোট হয়ে এই বিষয়টির সমাধানের পথ বের করা উচিত।
সর্বাধিক ১১ বার গুজবের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান
বাংলাদেশে নারীরা বিশেষ করে রাজনীতি এবং বিনোদন জগতের পরিচিত নারীরা জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আলাদাভাবে গুজবের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে সাদিয়া আয়মান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পক্ষে আমি কথা বলেছি। আমি কোনো রাজনীতির জায়গা থেকে করিনি। রাজনীতির ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পছন্দ করি বা অন্যায় হলে সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করি। এটা সত্য যে জুলাই আন্দোলনের পরে আমি বা আরো কয়েকজন আছে যারা এটার পক্ষে কথা বলেছে তারা সমস্যার মুখে পড়েছে। আমি বলবো না, যারা জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল তারাই এটা করেছে। আমি জানি না আসলে কারা এটা করেছে।
এআইয়ের যে ব্যাপারটা চলছে, এই ব্যাপারটাও আমার মনে হয় যে কোনো একটা পক্ষ বা বিপক্ষ তারা বুঝেশুনেই এটা করছে। আমি এখনও সোশাল মিডিয়ায় অনেক কমেন্টস পাই মেসেজ পাই, যেগুলো বুঝা যাচ্ছে যে জুলাই আন্দোলনের সরব ছিলাম দেখেই আমাকে এখন এরকম কথা শুনতে হচ্ছে। বাট ইটস ওকে। আমি জানি যে সত্য এক সময় সামনে আসবে। আমি আসলে কেমন বা আমি আসলে কী নিয়ে কথা বলেছি, কী পক্ষ বিপক্ষে কথা বলেছি। এগুলো তো মানুষ জানে। নতুন করে ক্লিয়ার করার কিছু নেই। এটা সত্য যে যারা এটার পক্ষে ছিল তাদের একটু হলেও সমস্যা একটু হলেও অবলিগেশন ফেস করতে হচ্ছে। আশা করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয় এটা সাময়িক বিষয়।’
আমার বার্তা/এমই