সৌন্দর্য নিয়ে অন্ধ দৌড়ে উদ্বিগ্ন কেট উইন্সলেট

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৪ | অনলাইন সংস্করণ

  মোঃ আবু সাঈদ

হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তারকা সংস্কৃতিতে বাড়তে থাকা প্লাস্টিক সার্জারি- নির্ভরতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তরুণ শিল্পীরা নিখুঁত সৌন্দর্যের খোঁজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপে অন্ধ দৌড়ে নেমেছেন-এ প্রবণতা তাকে গভীরভাবে বিচলিত করছে বলে জানিয়েছেন টাইটানিক-খ্যাত এই অভিনেত্রী।

“চেহারা দিয়ে আত্মসম্মান মাপা ভয়ংকর”-কেট

উইন্সলেট বলেন, এখনকার অনেকেই মনে করেন বাহ্যিক সৌন্দর্যই আত্মবিশ্বাসের একমাত্র উৎস। তার মতে, মানুষ যখন শুধু নিজের মুখমণ্ডল বা গড়নকে সাজাতে ব্যস্ত থাকে, তখন তারা নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা করে ফেলে—যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি লক্ষ্য করেছেন, লালগালিচায় নানা ধরনের শরীরী গড়নের অভিনেত্রী থাকলেও একই সঙ্গে দেখা যায়, বহু শিল্পী ওজন কমানোর ওষুধ কিংবা দ্রুত বদলে যাওয়ার প্রসাধন সার্জারির দিকে ঝুঁকছেন।

“নিজেদের শরীরে কী ঢুকছে, তারা কি জানেন?”

কেটের মতে, প্লাস্টিক সার্জারি ও ইনজেকশন-নির্ভর এই সৌন্দর্যচর্চা কেবল তারকাদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই; সাধারণ নারীরাও বোটক্স বা ঠোঁট ফিলারের জন্য সঞ্চয় করছেন, যা তাকে আরও বেশি উদ্বিগ্ন করে।
তিনি বলেন, “মানুষ নিজেদের শরীরে আসলে কী ব্যবহার করছে, অনেকেই জানেই না। এটা ভয় ধরিয়ে দেয়।”

বয়স লুকাতে না চাওয়ার ঘোষণা

অভিনেত্রী জানান, বয়সের ছাপটিই তাকে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দেয়। তার মতে, ৭০ পার করা বহু নারীর স্বাভাবিক সৌন্দর্যই সবচেয়ে অনন্য। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম সৌন্দর্যের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারছে না- এ বিষয়টি তাকে কষ্ট দেয়।

টাইটানিকের পর নিষ্ঠুর বডি-শেমিং

উইন্সলেট জানান, টাইটানিক- এর সাফল্যের পর তিনি অযাচিত সমালোচনা ও বডি-শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন। পুরস্কার মৌসুমে এক উপস্থাপক রেড কার্পেটে তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন যা একজন তরুণী শিল্পীর জন্য ছিল অত্যন্ত অপমানজনক।
কেট বলেন, তিনি সোজাসাপটা সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সব নারীর পক্ষেই।

“আমি নাকি এত মোটা ছিলাম যে জ্যাক দরজায় উঠতে পারেনি” বিদ্রূপের স্মৃতি

২০২২ সালের আরেক সাক্ষাৎকারে কেট জানান, অভিনয়শিক্ষার সময়ও তাকে ‘মোটা মেয়ের চরিত্রে’ অভিনয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। টাইটানিক–এর পর সে চাপ আরও বেড়ে যায়।
মানুষ সিনেমার শেষ দৃশ্য নিয়েও তাকে ব্যঙ্গ করেছে “রোজ এত মোটা ছিল যে জ্যাক ভাসমান দরজায় উঠতে পারেনি।”
তিনি বলেন, এসব মন্তব্য ছিল সীমাহীন নিষ্ঠুরতা। “আমি তখন বয়সে তরুণী, শরীর পরিবর্তনের পর্যায়ে ছিলাম, অনিশ্চয়তায় ভুগতাম। মানুষ এসব বিদ্রূপ করে পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।”

“এটা নিছকই বুলিং”

কেট উইন্সলেট মনে করেন, সৌন্দর্য নিয়ে এই অমানবিক চাপ এবং বডি শেমিং ছিল নির্যাতনেরই এক রূপ। সমাজ আজও একই ভুল করছে, আর তাতেই তরুণীরা সৌন্দর্যের আসল মানে ভুলে যাচ্ছে।