গ্রেটার গাজামুখী জাহাজ মিশর উপকূলে পৌঁছেছে

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৫, ১৩:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে যাত্রা করা ‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণ সহায়তা জাহাজটি ১২ জন সমাজকর্মীসহ মিশরের উপকূলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বহুল আলোচিত সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। 

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই জাহাজে থাকা জার্মান মানবাধিকার কর্মী ইয়াসেমিন আচার এএফপিকে জানান, ‘আমরা এখন মিশরের উপকূলে অবস্থান করছি। আমরা সবাই সুস্থ আছি।’

এর আগে শনিবার জাহাজটি মিশরের আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছে বলে জানায় ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের’ সদস্য ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ব্রেকিং দ্য সিজ অব গাজা’। 

শনিবার লন্ডন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

সংগঠনটি জানায়, জাহাজে থাকা সবাই যেন নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করতে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। 

একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, যেকোনো রকম বাধা বা হামলা হবে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’।

এদিকে জাহাজে অবস্থান করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিমা হাসান বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’র জন্য নিরাপদ পথ নিশ্চিত করা হয়।

ফরাসি এই নেত্রী জাহাজ থেকে জানান, ‘ম্যাডলিন’ যেন গাজায় পৌঁছাতে পারে এবং সবাই নিরাপদে থাকে তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, জাহাজ থামাতে কিংবা আক্রমণ চালাতে চাইলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং এতে জাহাজে থাকা ১২ কর্মীর অভিযান ব্যাহত হবে না।

এদিকে দখলদার ইসরাইল আগেই ঘোষণা করেছে যে, তারা জাহাজটিকে গাজায় ঢুকতে দেবে না। ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র জাহাজটিকে তার দেশের জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বর্তমান নৌচলাচলের তথ্য অনুযায়ী জাহাজটি সোমবার গাজার উপকূল থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার) দূরত্বে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এই স্থানটি মূলত অতীতে অন্যান্য গাজামুখী জাহাজ আটকানোর স্থান হিসেবে পরিচিত।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া আক্রমণের আগেও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলি নৌ অবরোধের অধীনে ছিল। ইসরাইল অতীতে সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের অবরোধ কার্যকর করেছে।

২০১০ সালে তুরস্কের জাহাজ মাভি মারমারার পের কমান্ডো অভিযানে ১০ জন বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়। ফ্লোটিলার জাহাজটি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করার সময় একই রকমের একটি ত্রাণ সহায়তার অংশ ছিল।

মে মাসে কনসায়েন্স নামের আরেকটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ গাজা যাওয়ার পথে ড্রোন হামলার শিকার হয়। এর ফলে সাইপ্রাস ও মাল্টা তাদের দুর্দশার ডাকে সাড়া দিয়ে উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠায়।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন হলো মূলত ২০১০ সালে চালু হওয়া গাজার জন্য মানবিক সাহায্যের ওপর অবরোধের বিরোধিতাকারী গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট।

ইসরাইলি অবরোধে গাজা ভূখণ্ডে সৃষ্ট মানবিক সংকটের জন্য দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নিন্দার মুখোমুখি। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, টানা ২০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪,৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২৫,৬৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে। জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।সূত্র: আল-জাজিরা।

আমার বার্তা/এল/এমই