বাবার উৎসাহে টেনিসের দুনিয়ায়, সেই বাবা কেন হত্যা করলেন মেয়েকে?
রিলস ভিডিও, প্রতিবেশীদের কটাক্ষ নাকি অন্য কিছু
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১৬:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে বাবার গুলিতে টেনিস খেলোয়াড় মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে। এরই মধ্যে বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
বাবা দীপক যাদবের হাত ধরেই টেনিসের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন জাতীয় পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব। মেয়ের খেলা, প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতা— সব দিক থেকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন দীপক। মেয়ের টেনিস প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলতেও সহযোগিতা করেছিলেন। যে মানুষটি নিজে হাতে তার মেয়ের স্বপ্ন গড়ে দিয়েছিলেন, কী এমন হলো যে সেই তিনি নিজে হাতে মেয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলেন? জীবন কেড়ে নিতেও কুণ্ঠাবোধ করলেন না?
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০০০ সালের ২৩ মার্চ রাধিকার জন্ম হরিয়ানার গুরুগ্রামে। একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন। তারপর ২০১৮ সালে বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে দ্বাদশ পাশ করেন। ছোটবেলা থেকেই টেনিসের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। আর সেই উৎসাহ জুগিয়েছিলেন রাধিকার বাবা দীপক যাদব। বছর পঁচিশের রাধিকা হরিয়ানার সেরা পাঁচ টেনিস খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন ছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন-এর মহিলাদের ডবলসে রাধিকার র্যাঙ্ক ছিল ১১৩। ৫৭টি প্রতিযোগিতায় ১৮টি সোনার পদক জিতেছিলেন হরিয়ানার এই টেনিস খেলোয়াড়।
তার পরিচিত এবং আত্মীয়রা জানিয়েছেন, অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন রাধিকা। কাঁধের চোট পাওয়ার জন্য খেলা থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি একটি টেনিস প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছিলেন। সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে টেনিস প্রশিক্ষণ দিতেন রাধিকা। খুব ভালো চলছিল সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। শুধু খেলা নিয়েই পড়ে থাকতেন, এমনটা নয়। সমান ভাবে বাড়ির কাজও সামলাতেন তিনি। যে মেয়ের ওপর বাড়ির প্রতিটি সদস্যের এত ভরসা ছিল, তার সাফল্যে আনন্দিত ছিল, সেই মেয়েই হঠাৎ করে তার বাবার চক্ষুশূল হয়ে উঠলেন কেন? এখন সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। রাধিকা খুনের পর নেপথ্যে অনেকগুলো প্রসঙ্গ সামনে আসছে।
রিলস ভিডিও
প্রাথমিকভাবে খুনের নেপথ্যে যে তত্ত্বটি উঠে এসেছে, সেটি হলো রাধিকার ইনস্টাগ্রামে রিলস বানানো। এই বিষয়টি নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না তার বাবা দীপক। তিনি নাকি বার বার আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আপত্তি শোনেননি রাধিকা। তার পরই মেয়েকে দীপক গুলি করে খুন করেন বলে দাবি। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, তদন্ত এগোতেই দেখা গিয়েছে, ইনস্টাগ্রাম রিল বানানো খুনের নেপথ্য কারণ নয়। তা হলে? তারপর উঠে আসে আরও একটি তত্ত্ব। যদিও তদন্তকারীদের সন্দেহ, সেই তত্ত্বেরও কতটা সত্যতা রয়েছে সেই বিষয়টাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টেনিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পুলিশি জেরায় দীপক নিজে একটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও তাঁর সেই দাবির সত্যতা কতটা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তদন্তকারীরা। গুরুগ্রাম পুলিশ সূত্রে খবর, রাধিকার টেনিস প্রশিক্ষণকেন্দ্র নিয়ে খুব একটি খুশি ছিলেন না দীপক। তিনি চাইতেন যে, রাধিকা এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করে দিক। কিন্তু রাধিকা সেই পথে হাঁটেননি। তার মধ্যে প্রশিক্ষণকেন্দ্রও বেশ সফল ভাবে চলছিল।
প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কটাক্ষ
রাধিকার প্রশিক্ষণকেন্দ্র ভালো চলায় পড়শি এবং আত্মীয়দের কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছিল বলে দাবি করেছেন দীপক। তারা কটাক্ষ করে তাকে বলতে শুরু করেন, ‘ভালোই তো, বসে বসে মেয়ের উপার্জনের টাকায় খাচ্ছিস’। এই কটাক্ষ তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তার মধ্যে রাধিকাকে প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করার কথা বললেও তিনি শুনতে চাননি। সব মিলিয়ে গত ১৫ দিন ধরে অত্যন্ত মানসিক দোলাচলে ছিলেন বলে দাবি দীপকের। মেয়ের জন্য অপমান সহ্য করতে হচ্ছে বাইরের লোকের কাছে, সেটা মানতে পারেননি বলেও দাবি তার।
রাধিকার মা মঞ্জু যাদব মেয়ের খুনের বিষয়ে একটি কথাও বলেননি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শুধু দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তার জ্বর হয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে এই তত্ত্বগুলি উঠে এলেও পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রশ্নও উঠে এসেছে। যে ব্যক্তি নিজের মেয়ের সাফল্যে গর্ববোধ করতেন, শৈশব থেকেই তাকে নানা রকম ভাবে সব কিছুতে সমর্থন করতেন, কী এমন ঘটল যে রাধিকার বিরুদ্ধে এত আক্রোশ জন্মেছিল তার। ইনস্টাগ্রাম রিল বানানোর বিষয়টি খুনের কারণ বলে মনে করছেন না তদন্তকারীদের একাংশ। আবার প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করা নিয়ে বাবা-মেয়ের ঝামেলাকেও এই চরম পদক্ষেপের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে না। যদি প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ করার বিষয়টিই এর কারণ হতো, তাহলে শুরু থেকেই কেন এর বিরোধিতা করেননি দীপক? দীর্ঘ দিন চলার পর কেন তা বন্ধ করার প্রসঙ্গ উঠল? তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, এটি ‘সম্মানরক্ষার্থে’ খুন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ রাধিকাকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বাবার বিরুদ্ধে। রাধিকা তখন রান্নাঘরে ছিলেন। দীপক তাকে লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালান। তিনটি গুলি রাধিকার পিঠ, বুক ফুঁড়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাধিকার।