যুক্তরাজ্য
প্রথম মুসলিম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রায়েনারের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তার মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল এনেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো শাবানা মাহমুদকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া।
মন্ত্রিসভার এ রদবদল নিয়ে কিয়ার স্টারমার বিশ্বাস করেন, তার মন্ত্রিসভায় সঠিক ব্যক্তিরা রয়েছেন, তবে তারা ভিন্ন ভিন্ন চেয়ারে আসীন। সে বিবেচনায় হয়ত তিনি এ রদবদল নিয়মিত করবেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবৈধ অভিবাসন ও শরণার্থী ইস্যু মোকাবিলা করা। এ ইস্যুকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে মোকাবিলা করতেই শাবানা মাহমুদকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা শাবানা মাহমুদ লেবার দলীয় এমপিদের মধ্যে অভিবাসন ইস্যুতে তুলনামুলকভাবে কট্টরপন্থি বলে পরিচিত।
এদিকে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শাবানা মাহমুদ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এ চার দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যকে বলা হয় ‘পঞ্চনেত্র’ বা ‘ফাইভ আইজ’। চুক্তির উদ্দেশ্য হলো—যেসব ব্যক্তির আইনগতভাবে কোনো দেশে থাকার অধিকার নেই, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা এবং আন্তর্জাতিক সমঝোতা গড়ে তোলা।
চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে যাদের ওই দেশে থাকার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। দীর্ঘসূত্রতা, ভ্রমণ নথি দিতে অস্বীকৃতি বা সীমিত সহযোগিতা মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের জোরপূর্বক ফেরত নিতে অনিচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে ভিসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে অভিবাসন ঝুঁকির প্রতিফলন ঘটানোও থাকতে পারে। যেসব দেশ তাদের অবৈধ নাগরিকদের ফেরত নিতে গড়িমসি করবে, সেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়াও আনুপাতিক হারে কমিয়ে দেওয়া হবে।
এই যৌথ বিবৃতি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করতে যুক্তরাজ্য সরকারের অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার জননিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি—এবং আমরা আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে মিলে এটির মোকাবিলা করছি।
এই ঘোষণা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, যুক্তরাজ্যে থাকার কোনো বৈধ অধিকার না থাকলে আপনাকে আমরা বহিষ্কার করব। আর কোনো দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, নতুন সরকারের ‘পরিবর্তনের পরিকল্পনা’ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ফলে এরই মধ্যে সাফল্য আসছে। গত বছরের জুলাই থেকে ফেরত পাঠানো এবং অপরাধী নেটওয়ার্ক দমনে সাফল্য বেড়েছে। এখন আমাদের আরও এগোতে হবে।
প্রথম মুসলিম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদের পথচলা শুরু
এছাড়া, ফাইভ আইজ দেশগুলো যৌথ সম্পদ ব্যবহার এবং কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশেষ করে, অভিবাসীরা যাত্রাপথে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে—এ সমস্যা মোকাবিলায় তারা একসঙ্গে পদক্ষেপ নেবে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে আসা প্রায় ৮০ শতাংশ অভিবাসী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেছে। তারা অবৈধ যাত্রার বিজ্ঞাপনে সাড়া দেয় বা পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির নেতৃত্বে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য হলো—যারা বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষ পাচার সহজতর করে বা সংঘবদ্ধ চক্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, তাদের শনাক্ত, নিরস্ত্র ও নিরুৎসাহিত করা।
নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তিনি কতটুকু আন্তরিক তা ফুটে উঠে স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
তিনি বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আর আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করা। সদ্য বিদায়ী অ্যাঞ্জেলা রায়েনারের ত্যাগকৃত উপ-নেতা হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি লেবার পার্টির উপনেতা হওয়ার জন্য প্রার্থী হচ্ছি না।’ যদিও তিনি একজন উপযুক্ত প্রার্থী হওয়ার যোগ্য।
শাবানা মাহমুদ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস পাকিস্তানে। তিনি ছোটবেলায় কিছু দিন সৌদি আরবে কাটিয়েছিলেন এবং পরে যুক্তরাজ্যে ফিরে আইন পড়াশোনা করেন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্কন কলেজ থেকে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি একজন ব্যারিস্টার হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন, বিশেষ করে পেশাগত দায়মুক্তির বিষয়ে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি ২০১০ সালে বার্মিংহাম লেডিউডের সদস্য হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তখনকার গুটিকয় মুসলিম এমপি যেমন রোশনারা আলী, ইয়াসমিন কোরেশি প্রমুখদের মধ্যে অন্যতম। এর পরের বছরের মধ্যে তিনি বিভিন্ন শ্যাডো ক্যাবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন যেমন: শ্যাডো ফিনান্সিয়াল সেক্রেটারি এবং শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারি। ২০১৫–২০২১ সময়কালে তিনি কিছু সময় বিরতি নেন, তবে পরে কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বে ফেরেন ও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০২৪ সালে লেবার পার্টির ক্ষমতায় আসার পর তিনি লর্ড চ্যান্সেলর ও জাস্টিস সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান, যেখানে তিনি কারাগারে ভিড় কমাতে হাজার হাজার বিচারাধীন আসামিকে আগে মুক্তি দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ তাকে হোম সেক্রেটারি পদে উন্নীত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শাবানা মাহমুদ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সফল হবে এটাই সবার কাম্য।