যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত যত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী চার্লি কার্ককে হত্যার পর দেশটিতে ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে। বুধবার উটাহ’র বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কার্ক গুলিবিদ্ধ হন। গুলি তার গলায় লাগে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা এখনো জানা যায়নি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং উটাহ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর একে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন।

কার্কের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় আরও একটি অধ্যায় যোগ করলো। আর একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যার দীর্ঘ ধারাবাহিকতার সর্বশেষ ঘটনা বলেও দেখা হচ্ছে। চলুন দেখে নেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আলোচিত কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।

আব্রাহাম লিঙ্কন (১৬তম প্রেসিডেন্ট)
আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট যাকে হত্যা করা হয়। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির এক নাট্যশালায় স্ত্রীকে নিয়ে নাটক দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন জন উইলকস বুথ নামের এক অভিনেতা তাকে গুলি করেন।

পরের দিন ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে-এমনটাই ধারণা করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে হত্যায় অভিযুক্ত বুথও ভার্জিনিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

জেমস গারফিল্ড (২০তম প্রেসিডেন্ট)
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসির এক রেলস্টেশনে জেমস গারফিল্ডকে গুলি করেন চার্লস গুইটো নামের এক ব্যক্তি। চিকিৎসকরা শরীর থেকে গুলি বের করতে না পারায় সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গারফিল্ড মারা যান। তিনি মাত্র কয়েক মাস ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। মানসিকভাবে অসুস্থ গুইটোকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৮৮২ সালের জুনে ফাঁসি দেওয়া হয়।

উইলিয়াম ম্যাককিনলি (২৫তম প্রেসিডেন্ট)
১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাফালো শহরে ভাষণ দেওয়ার সময় লিওন জোলগজ নামের একজন ‘অ্যানার্কিস্ট’ তাকে গুলি করেন। এর কয়েক দিন পর তিনি মারা যান। হত্যাকারীকে দোষী সাব্যস্ত করে একই বছরের অক্টোবরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

জন এফ কেনেডি (৩৫তম প্রেসিডেন্ট)
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাসে খোলা গাড়িতে যাত্রার সময় জন এফ কেনেডিকে লক্ষ্য করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেল থেকে গুলি চালানো হয়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও তিনি মারা যান। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রাক্তন মেরিন লি হার্ভি অসওয়াল্ডকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে লি হার্ভি অসওয়াল্ডকে ডালাসের এক নাইটক্লাব মালিক জ্যাক রুবি গুলি করে হত্যা করেন।

রবার্ট এফ কেনেডি (ডেমোক্র্যাট সিনেটর)
নিউইয়র্কের সিনেটর ও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই রবার্ট ১৯৬৮ সালের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি নির্বাচনে অংশ নেন। ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে বক্তৃা শেষ করার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের এক হোটেলে তাকে হত্যা করা হয়।

খুনি সিরহানকে ‘ফার্স্ট-ডিগ্রি’ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, পরে তা বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। তিনি এখনো কারাগারে রয়েছেন।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
১৯৬৮ সালে টেনেসির মেমফিসে এক শ্রমিক মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গেলে হোটেলের বারান্দায় নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংকে জেমস আর্ল রে নামের এক শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থি গুলি করে।

অল্প সময়ের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। এর আগেও তার ওপর একাধিকবার হামলার চেষ্টা হয়েছিল।

ম্যালকম এক্স
১৯৬৫ সালে নিউইয়র্কের এক বলরুমে পরিবারের সামনেই ম্যালকম এক্সকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর। ম্যালকম এক্স প্রথমদিকে নেশন অব ইসলামের প্রভাবশালী মুখপাত্র ছিলেন, পরে তার অবস্থান কিছুটা নরম হয়ে যায়। তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামকে একটি সহনশীল ও ঐক্যবদ্ধ ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে তার সংগঠনের একটি সমাবেশে বক্তৃতার সময় নেশন অব ইসলামের সদস্যদের হাতে তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় মুহাম্মদ আজিজ, খালিল ইসলাম ও থমাস হাগান নামের তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে আজিজ ও খলিলের সাজা বাতিল করা হয়।

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও হামলার চেষ্টা
সম্প্রতি ২০২৫ সালের ১৪ জুন মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে দুই ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাকে তাদের বাড়িতে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এদের মধ্যে স্টেট প্রতিনিধি মেলিসা হর্টম্যান ও তার স্বামী মার্ককে তাদের বাসায় হত্যা করা হয়। এটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

একই দিনে স্টেট সিনেটর জন হফম্যান ও তার স্ত্রী ইয়ভেটকে গুলি করা হলেও তারা বেঁচে যান। গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর দুবার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে পেনসিলভানিয়ার বাটলার শহরে খোলা আকাশের নিচে এক সমাবেশে তার ওপর গুলি চালানো হয়, যা সাম্প্রতিক উটাহ’র ঘটনার সাথে বেশ মিল রয়েছে।

সেপ্টেম্বরে ফ্লোরিডায় তার গলফ কোর্সে সিক্রেট সার্ভিস আরেকটি হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ করে। এর দুই বছর আগে ২০২২ সালে এক হামলাকারী হাতুড়ি নিয়ে সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বাড়িতে প্রবেশ করে হামলা চালায়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


আমার বার্তা/জেএইচ