আফগানিস্তানকে হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের
সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যেতে পারে
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান যদি পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যেতে পারে। এমন হুঁশিয়ারিই দিয়েছে পাকিস্তান।
সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্তে টানা সংঘর্ষে প্রাণহানির পর কাতারের রাজধানী দোহায় এই সমঝোতায় পৌঁছেছিল ইসলামাবাদ ও কাবুল। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুদ্ধবিরতি টিকে থাকা নিয়ে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ। তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে কিনা, তা নির্ভর করছে আফগান তালেবানের ওপর, তারা পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে কি না।
সোমবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
টানা কয়েক দিনের সীমান্ত সংঘর্ষে বহু প্রাণহানির পর দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী এই দুই দেশ দোহায় গত সপ্তাহান্তে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
অতীতে একে-অপরের মিত্র এই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় পাকিস্তানের অভিযোগের পর। ইসলামাবাদ দাবি করে, আফগান ভূখণ্ডে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান আফগান তালেবানকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বলে এবং পরবর্তীতে বিমান হামলাও চালায়।
আসিফ বলেন, “আফগানিস্তান থেকে কোনো হামলা বা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলে সেটি এই চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। সবকিছুই এই একটি শর্তের ওপর নির্ভর করছে।”
তিনি জানান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও কাতারের স্বাক্ষরিত লিখিত এই চুক্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে- কোনও পক্ষ সীমান্ত অতিক্রম করবে না। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষায়, “যতক্ষণ চুক্তি লঙ্ঘন না হয়, যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে”।
আসিফ আরও বলেন, একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠনের জোট তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আফগানিস্তান থেকেই পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এবং তারা এই কাজে আফগান তালেবানের “মৌন সমর্থন” পাচ্ছে।
তবে কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আফগান তালেবান সরকার বলেছে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য কোনো গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে না, বরং ইসলামাবাদ আফগানিস্তান সম্পর্কে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে এবং নিজেদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসীদের লালন করছে।
গত রোববার তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “দোহা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কোনও পদক্ষেপ নেবে না এবং পাকিস্তানবিরোধী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থনও দেবে না।”
সন্ত্রাসীগোষ্ঠী টিটিপি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো উল্টে দিয়ে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর হামলাও বাড়িয়েছে।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যার লক্ষ্যে গত ৯ অক্টোবর তারা আফগান রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায়। পরে মেহসুদ এক ভিডিও বার্তায় নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দেন।
আসিফ বলেন, “আমাদের ভূখণ্ডে হামলা হচ্ছিল, তাই আমরাও পাল্টা জবাব দিয়েছি। চোখের বদলে চোখ। তারা কাবুলে আছে, সর্বত্র আছে। যেখানে থাকবে, আমরা আঘাত করব। কাবুল কোনো নিষিদ্ধ এলাকা নয়।”
তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পরবর্তী বৈঠক হবে ২৫ অক্টোবর।
পাকিস্তানি সেনা সূত্র জানায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩১১ সেনা সদস্যসহ ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। মূলত নিহতদের বেশিরভাগই প্রাণ হারিয়েছেন টিটিপির হাতে।
তবে আফগান তালেবান বারবার পাকিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং সম্প্রতি তারা এক যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মিরকে ভারতের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর এটি ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করেছে ইসলামাবাদকে।
টিটিপি হচ্ছে ২০০৭ সালে গঠিত একাধিক জঙ্গি সংগঠনের জোট, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানকে টার্গেট করা। জাতিসংঘের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে এখনো ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টিটিপি জঙ্গি অবস্থান করছে এবং তারা ন্যাটো বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।
আমার বার্তা/জেএইচ