সরাসরি হত্যার নির্দেশ হাসিনার অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট: তাজুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দেওয়াই শেখ হাসিনাকে অপরাধী প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ট্রাইব্যুনাল-১ এ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এ মন্তব্য করেন তাজুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন—যেখানে দেখবে ওপেনে গুলি করবে, নির্দেশ দেওয়া আছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এর দায় পড়ে। এর আগে গণআন্দোলন চলাকালে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু ও অধ্যাপক মাকসুদ কামালের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথন নিয়ে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত অডিও বিশ্লেষণ করেন তাজুল ইসলাম।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে আজ মঙ্গলবার। পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
তৃতীয় দিনের মতো আজ দিনভর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনসহ কয়েকটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। একইসঙ্গে এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষীর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে গত রোববার (১২ অক্টোবর) যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। এর পরের দিন সোমবার (১৩ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ওই দিন বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা এ মামলার বিচারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
এরআগে, ট্রাইব্যুনালের ধার্য করা দিন অনুযায়ী ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে প্রসিকিউশন। এরপর ১৩ অক্টোবরও প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। আদালতে আসামি হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তারও আগে, গত ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশনের পক্ষে সর্বশেষ ও ৫৪তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। আসামিরা পলাতক থাকায় আইন অনুযায়ী তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই। ফলে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়েই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এর পরের ধাপই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের পরেই মামলাটি রায়ের দিকে এগিয়ে যাবে।
এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামি। তারা হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে মামুন পরে রাজসাক্ষী হিসেবে হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আমার বার্তা/এল/এমই