খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে কী হয়?
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

অ্যাপল সিডার ভিনেগার বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য প্রতিকারের মধ্যে একটি। রান্নাঘরে এটি ব্যতিক্রমী স্বাদ এবং নানামুখী ব্যবহারের জন্য পরিচিত। তবে রান্নায় ব্যবহারের বাইরেও অ্যাপল সিডার ভিনেগারের অনেক উপকারিতা আছে। বিপাক বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হজমে সহায়তা করা পর্যন্ত শারীরিক নানা সুস্থতায় কাজ করে এই পানীয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে খালি পেটে এটি পান করলে সেসব সুবিধা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে? সকালে প্রথমে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করলে তা শরীরকে কার্যকরভাবে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, খালি পেটে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করার ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-
১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
খালি পেটে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করা বিশেষভাবে কার্যকরী, কারণ এটি অ্যাসিটিক অ্যাসিডকে দ্রুত শোষিত হতে দেয়, শরীরকে আরও দক্ষতার সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এটি শর্করার হজমকে ধীর করে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, যা স্থিতিশীল রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস কেয়ারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, যারা ঘুমানোর আগে ভিনেগার খান, তাদের পরের দিন সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়ে দিন শুরু করলে তা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ভয় থাকে না। BMJ Nutrition, Prevention & Health-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়া অংশগ্রহণকারীরা সামান্য ওজন হ্রাস এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি অনুভব করেছেন। যদিও এটি দ্রুত বা একক সমাধান নয়, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সঙ্গে সকালের রুটিনে অ্যাপল সিডার ভিনেগার যোগ করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
৩. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
অ্যাপল সিডার ভিনেগার পেটের অ্যাসিড উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা খাবারকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। এটি পুষ্টির শোষণ উন্নত করে এবং খাবারের পরে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি কমায়। এর প্রাকৃতিক অ্যাসিডিটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের পরিবেশ বজায় রাখে, যা সামগ্রিক হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে সহায়তা করে।
৪. কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে
নিয়মিত অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়া, বিশেষ করে সকালে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর প্রাকৃতিক যৌগগুলো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার সকালের খাবারের অংশ হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার রাখতে পারেন।
৫. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে
আপনি যদি ত্বকের সমস্যা নিয়ে লড়াই করে থাকেন, তাহলে অ্যাপল সিডার ভিনেগার কিছুটা সহায়তা দিতে পারে। এর প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং pH-ব্যালেন্সিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে সাহায্য করে। সকালে নিয়মিত এটি গ্রহণ করলে আমাদের শরীর দিনের শুরুতে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, যা উজ্জ্বল ত্বক তৈরিতে অবদান রাখে।
ওজন কমানোর জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার কীভাবে পান করবেন?
ওজন কমানোর জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করার জন্য এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে ১-২ চা চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। সেরা ফলাফলের জন্য সকালে খালি পেটে এটি পান করুন। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারেন, তবে সব সময় এটি পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী?
যদিও অ্যাপল সিডার ভিনেগার সাধারণত পরিমিত পরিমাণে নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত সেবনের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন:
* অম্লতার কারণে দাঁতের এনামেল ক্ষয়।
* পেটের অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা।
* পানি মিশ্রিত না করে খেলে গলায় জ্বালা।
* মূত্রবর্ধক, ইনসুলিন বা হৃদরোগের ওষুধের সঙ্গে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়া
লক্ষ্য করুন
অ্যাপল সিডার ভিনেগার সব সময় পানি দিয়ে পাতলা করুন। যদি আপনার অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তবে এটি পান করার আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
বাড়িতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার তৈরি করবেন যেভাবে
আপেল, চিনি এবং পানি ব্যবহার করে বাড়িতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার তৈরি করতে পারেন। আপেল কেটে একটি জারে রাখুন। চিনি এবং পানি যোগ করুন, তারপর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। মিশ্রণটিকে একটি উষ্ণ, অন্ধকার জায়গায় ৩-৪ সপ্তাহের জন্য রেখে দিন। মাঝে মাঝে নেড়ে দেবেন। এরপর তরলটি ছেঁকে নিন এবং আরও ৩-৪ সপ্তাহের জন্য এটি অ্যাসিডিক না হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন।
আমার বার্তা/জেএইচ