মৌলিক সংস্কার শেষে দ্রুতই নির্বাচন সম্ভব: বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১৯:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলে মৌলিক সংস্কার শেষে ‘ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব’ বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউট’-এ যোগ দিয়ে তিনি সংস্কার উদ্যোগ, নির্বাচনব্যবস্থার ত্রুটি, নির্বাচনকালীন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রসঙ্গ ধরে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার মতে, বল এখন রাজনৈতিক দলের কোর্টে, তারা যত দ্রুত রাজি হবে, তত দ্রুতই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
নির্বাচনব্যবস্থায় আস্থাহীনতাকে মূল সমস্যা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই আস্থাহীনতার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। বিগত সময়ে দেশের ভোটব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।
এই আস্থাহীনতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। যার কাজ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কার্যকর করা। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন ছাড়া আরো অনেক অংশীজন থাকে। রাজনৈতিক দল ও সরকার তার অন্যতম। সরকার যদি না চায় তাহলে নির্বাচন কমিশনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয় না। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আমরা দেখেছি, সরকারের অনুগত লোকদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ছিলেন না, মেরুদণ্ডসম্পন্ন ছিলেন না। যার ফলে তারা নেতিবাচকতার কারণে আলোচনায় থাকতেন বা তারকা বনে যেতেন।
আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া ইসি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে কি না—জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয়, তারা যদি নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না দেয় তাহলে নিরপক্ষে নির্বাচন করা অসম্ভব। কাজেই ক্ষমতাসীন দলের নিরপেক্ষ ভূমিকা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনে নিরপেক্ষ হন না। তাই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। তাই আমাদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনীব্যবস্থা রাজনৈতি দলের ভেতর একনায়ক তৈরিতে সহায়ক কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের আইনি কাঠামো, সাংবিধান বিভিন্ন বিধান ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার, স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতায়িত করার জন্য। এই সংবিধানে স্বৈরাচার বা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার বিধি-বিধান রয়েছে। শেখ হাসিনাও সেই সুযোগ নিয়েছেন।
নির্বাচনীব্যবস্থায় আস্থা সংকট কাটানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব করেছি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে। আমরা বলেছি, আমাদের নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করা দরকার। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনকেও পরিচ্ছন্ন করা দরকার। একই সঙ্গে নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে, যাতে এককভাবে কউ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে।
সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিধান নেই। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে পরবর্তীতে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সরকার সৃষ্টি হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। জনগণ এবং আদালতের সম্মতিতে এ সরকার গঠন হয়েছে। কাজেই এখানে আইনগত কোনো সংকট নেই।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। গণতন্ত্রে নজরদারির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের মানবিক দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতা যেন আমাদের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে না পারে এ জন্য ভারসাম্য দরকার।
রাজনৈতি দলগুলোর ঐকমত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশা করি আমরা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না। যে সংস্কারগুলো দরকার সেগুলো আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে করতে পারব বলে প্রত্যাশা করি। স্বৈরাচার আবার ফিরে আসুক, এটা আমরা কেউই চাই না। আমাদের রাজনীতিবিদরাও দেশপ্রেমিক, এ দেশের মানুষ। আমরা আশা করছি, তারাও কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করবেন।
রাজনৈতি দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ২৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ করেছি। আর ৩৫ দলের মতামত পেয়েছি। তাদের মধ্যে অনেকগুলো মৌলিক প্রস্তাবে মতপার্থক্য আছে। আমরা জানার চেষ্টা করছি তারা কোন কোন ক্ষেত্রে একমত, আর কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিমত বা আংশিক একমত। আমরা আলোচনা করছি। আমাদের সঙ্গে আলোচনার পর অনেকেই তাদের মত বদলিয়েছেন। আশা করছি, আলোচনার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো আরো নতুন করে ভাববে। এই বল রাজনৈতিক দলের কোর্টে। দলগুলো যদি দ্রুত একমত হয় তাহলে আমরা একটা জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারি। জাতীয় সনদ হবে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। যত দ্রুত দলগুলো একমতে পৌঁছাবে তত দ্রুত নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা শুরু করবে।
এনসিপি চায় আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। আর বিএনপি বলছে, সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য হওয়া দরকার। এগুলো বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাহলে স্বৈরাচার আসার পথ বন্ধ হবে।
আমার বার্তা/এমই