১১০২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এস আলমের বিরুদ্ধে দুই মামলা অনুমোদন

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ১৮:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম : ফাইল ছবি

নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণের নামে ১ হাজার ১০২ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রথম মামলায় ঋণের নামে ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৫৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে সাইফুল আলমসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায় একই কায়দায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে ৫৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায়ও সাইফুল আলমসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা হতে জোনাল অফিস ও পরে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন করে নামসর্বস্ব কোম্পানি মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, জুবিলি রোড শাখায় বাই মুরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগ সীমা ৭২ কোটি এবং এলসি সীমা ৮০ কোটি টাকার বিনিয়োগ (ঋণ) সুবিধা প্রদান করা হয়। ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (ঋণ) গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি না নেওয়া, গ্রাহকের ঠিকানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যাচাই না করা, হালনাগাদ বিমা পলিসি ও ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া, ল’ ইয়ার স্যাটিসফেকশন সার্টিফিকেট না নেওয়া, এনইসি গ্রহণ না করা, সহায়ক জামানতের অতিমূল্যায়নসহ যথাযথ রেকর্ডপত্র ছাড়া ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ঋণের ক্ষেত্রে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জুবিলি রোড শাখা থেকে বিনিয়োগ সীমার বিপরীতে ২০১২ সালের পরবর্তী বছরগুলোতে ঋণের কোনো টাকা পরিশোধ না করা সত্ত্বেও শাখা কর্তৃক ভুয়া ডকুমেন্ট প্রেরণ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করা হয় এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিনিয়োগ সীমা ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৪৫০ কোটি টাকা সীমাতিরিক্ত বিতরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মোট ৫৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিভিন্ন নামসর্বস্ব হিসাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই টাকা বিভিন্ন ডিলের মাধ্যমে সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের হিসাব থেকে মেসার্স শাহাজি ট্রেডার্স, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স জিন্নাহ কর্পোরেশন, মুসা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন কোম্পানির অনুকূলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই হিসাবসমূহ থেকে ৫টি ডিলের মাধ্যমে মোট ১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে (এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লি., এস আলম রিফাইন্ড সুগার লি.) স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলার এজাহারে বলা হয়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজ নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারীর সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা থেকে জোনাল অফিস ও পরে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন করে।

এতে বলা হয়, নামসর্বস্ব কোম্পানি মেসার্স হুদা এন্টারপ্রাইজের নামে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আন্দরকিল্লা শাখায় বাই মুরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগ সীমা ৫০ কোটি এবং এলসি সীমা ৫৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়। উক্ত ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (ঋণ) গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি না নেওয়া, গ্রাহকের ঠিকানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যাচাই না করা, হালনাগাদ বীমা পলিসি ও ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া, ল’ ইয়ার স্যাটিসফেকশন সার্টিফিকেট না নেওয়া, সহায়ক জামানতের অতিমূল্যায়নসহ যথাযথ রেকর্ডপত্র ছাড়া ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।

এছাড়া ঋণ বিতরণের পর আন্দরকিল্লা শাখা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান যেমন- ভেনাস ট্রেডিংস লি., রিজেনেবল ট্রেডার্স লি., আব্দুল আওয়াল অ্যান্ড সন্স লি., ইউনিয়ন প্যাসিফিক সোর্স অ্যান্ড ট্রেডের অনুকূলে ঋণের টাকা স্থানান্তর করা হয়। উক্ত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসাব থেকে পরবর্তীতে চেক ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ২টি প্রতিষ্ঠানে মোট ১৩০ কোটি টাকা স্থানান্তর করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, ঋণ প্রদানের পরবর্তী বছরগুলোতে অর্থাৎ, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের আবেদন, শাখা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী বিনিয়োগ হিসাব নিয়মিত রাখার জন্য মুনাফাসহ বছর বছর নবায়ন করা হতো। এই প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত বিনিয়োগ সীমা (ঋণ সীমা) ৪৫ কোটি টাকা থাকলেও সময়ে সময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থছাড় করে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ করে মোট ৫৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।


আমার বার্তা/এমই