উমর ভাইয়ের পদকের প্রয়োজন নাই, পদকের উনাকে প্রয়োজন: ফারুকী
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘উমর ভাইয়ের পদকের প্রয়োজন নাই, পদকের উনাকে প্রয়োজন। এই রাষ্ট্রের উনাকে সেলিব্রেট করা প্রয়োজন। প্রয়োজন উনাকে পাঠের।’
লেখক, গবেষক ও মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আজ রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমব কথা বলেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমি বড় মানুষদের দূর থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু সরকারি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর সাথে ইন্টারেকশন জরুরি হয়ে পড়ে একুশে পদক দেওয়ার সময়। তিনি কখনোই কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি। এবারও গ্রহণ করবেন না জেনেও তাঁকে পুরস্কার প্রদানের ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিই আমরা।
‘কারণ, উমর ভাইয়ের পদকের প্রয়োজন নাই, পদকের উনাকে প্রয়োজন। এই রাষ্ট্রের উনাকে সেলেব্রেট করা প্রয়োজন। প্রয়োজন উনাকে পাঠের। আমরা সব লাইব্রেরিতে তাই উনার বইয়ের সরবরাহ নিশ্চিত করেছি।
‘তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানাই। তাঁর চিন্তা এবং বিশ্লেষণ আমাদের জন্য এক বিরাট শক্তি হয়ে থাকল।’
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘একতরফা ইতিহাস ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলো তাঁর লেখায় তুলে রেখেছিলেন উমর ভাই, বদরুদ্দীন উমর। তাঁর ইতিহাস আলোচনা আর নির্মোহ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনন্য। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো উনাকে সেলেব্রেট করা দূরে থাক, উনার লেখা বই যেন সরকারি পাঠাগারে না থাকে তার ব্যবস্থা করেছিল। কারণ? আওয়ামী মিথ্যা বয়ান আর ইতিহাস কল্পনাকে তিনি প্রশ্ন করেছেন।
‘হেজেমনিক ক্লাইমেটের বাইরে গিয়ে নতুন বাংলাদেশের চিন্তার গতিপথ নির্ধারণে যে কয়জন বিশ্লেষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, উমর ভাই তাঁদের মধ্যে একজন।’
এ ছাড়া বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক বার্তায় তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান উপদেষ্টা।
শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বদরুদ্দীন উমর সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পক্ষে সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও মনীষা নিয়ে অবিচল থেকে ও নির্ভীক চিত্তে কাজ করে গেছেন। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সজাগ ও সুদৃঢ়। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসচর্চা ও স্বাতন্ত্রিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বদরুদ্দীন উমর তাঁর গবেষণা ও লেখনীতে ভাষা আন্দোলন থেকে পরবর্তীকালের বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনপনেয় দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
‘রাষ্ট্রীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অটল প্রত্যয়ে দাঁড়িয়ে গতানুগতিক তোষণনীতির বাইরে অবিচল অবস্থান নিয়ে তিনি মুক্তচিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করেছেন। তিনি কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠানের দাসত্ব না করে নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর বক্তব্য ও বিশ্লেষণ দেশের রাজনীতির প্রকৃত গতিপ্রকৃতি অনুধাবনে দৃষ্টি-উন্মোচনী ভূমিকা রেখেছে।
‘আমাদের বিশ্বাস, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন গতিপথ নির্মাণে তাঁর লেখনী অনিবার্য ভূমিকা পালন করে যাবে।’
আজ সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে বদরুদ্দীন উমর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি।
বদরুদ্দীন উমর তাঁর পেশাজীবন শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একসময় তিনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৩ সালে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি দল প্রতিষ্ঠা করে এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর।
আমার বার্তা/এমই