তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের সঙ্গে থাকবে বিদেশি কোম্পানি
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাশাপাশি আরও একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারও ইঙ্গিত দিয়েছিল, একটি জাপানি কোম্পানি এই দায়িত্ব নিতে পারে।
বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিমানের সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ রোববার সংবাদ সংস্থা বাসসকে জানান, তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাশাপাশি আরও একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সরকার এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এতে যাত্রীসেবার মান উন্নত হবে এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতা ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আমরা চাই না, বিমানের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তবে একই সঙ্গে যাত্রীসেবার মানও যেন নেমে না যায়। তাই প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করাই এখন জরুরি।’
আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মান একবারে অর্জন না-ও হতে পারে; তবে অন্তত মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক সেবা নিশ্চিত করা আবশ্যক বলে উল্লেখ করেন এই উপদেষ্টা।
বর্তমানে দেশের সব বিমানবন্দরে শুধু বিমানই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে থাকে। প্রায় ৪০টি বিদেশি এয়ারলাইনসের সেবা দিয়ে বিমান প্রতিবছর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করে। যদিও নতুন যন্ত্রপাতি ও জনবল বাড়ানোর দাবি করছে বিমান। যাত্রী ও এয়ারলাইনসগুলো দেরি, অদক্ষতা এবং কখনো কখনো চুরির অভিযোগ করছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ এয়ারলাইনস তৃতীয় টার্মিনালে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবাদাতা চায়। যদিও বিমানের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের দাবি, ২০২৩ সালে ৫৭ হাজারের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান।
গত এক বছরে ৩ হাজার ৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট যন্ত্রপাতি কিনতে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরও জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ চলছে। প্রকারভেদে প্রায় ৭০ ধরনের নতুন যন্ত্রপাতি শিগগির যুক্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মুখপাত্র এ বি এম রওশান কবির জানান, বিদেশি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আনলে জাতীয় রাজস্বে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
এদিকে নতুন টার্মিনালের পরিচালনা নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিন দিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব আজ শুরু হয়েছে। প্রথম দুই দিনের আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক আর সমাপনী দিনে সভাপতিত্ব করবেন উপদেষ্টা বশির। আন্তর্জাতিক অর্থ করপোরেশন (আইএফসি) লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে অংশ নিচ্ছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বিমানের জন্য দুই বছরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব নির্ধারণ করায় কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা আরও বিস্তৃত পরিচালন ও রাজস্ব ভাগাভাগির সুযোগ চাইছে।
সূত্র জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তির আওতায় বিমানের সঙ্গে বেসরকারি অংশীদারের একটি সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) হবে। তবে বিমান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মক্ষমতা সূচক অর্জনে ব্যর্থ হলে বেসরকারি অপারেটর চাইলে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকে বিমানের পাশাপাশি যুক্ত করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় নির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী ধারণক্ষমতা দাঁড়াবে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১২ লাখ টনে। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই আধুনিক টার্মিনালে থাকছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও তিনটি ভিআইপি ডেস্ক। সূত্র : বাসস
আমার বার্তা/এমই