মাজার-মন্দির-আখড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সম্প্রীতি যাত্রার
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাজার, মন্দির, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ নিয়ে গঠিত নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্প্রীতি যাত্রা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় প্ল্যাটফর্মটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মীর হুযাইফা আল-মামদূহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে এই সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে মন্দির, মাজার, আখড়া, এমনকি বাউল আসরে হামলা বেড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়, সুফি, বাউল, আদিবাসীসহ নানা প্রান্তিক গোষ্ঠী একযোগে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশের ২৯টি জেলা ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে এবং ২৪টি মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে। কেবল গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ৮০টি মাজার বা দরগাহে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি কুমিল্লা, রাজবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুর, মাজার ভাঙা, এমনকি কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সম্মেলনে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, রাষ্ট্র চাইলে দাঙ্গা হয় না। এখনো হাজারো নিপীড়নের বিচার হয়নি। হামলার ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়ায় অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে সম্প্রীতি যাত্রা। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘সম্প্রীতি কমিটি’ গঠন, বিশেষ মনিটরিং টিম গড়ে তুলে হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ফ্যাক্টচেক টিম সক্রিয় করা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও উপাসনালয়ের জন্য দ্রুত সহায়তাকাঠামো তৈরি এবং নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও সরকারের কাছে নীতি প্রস্তাব উত্থাপন।
প্ল্যাটফর্মটি জনগণকে গুজব প্রতিরোধে সচেতন হতে, ঘটনার প্রমাণ সংরক্ষণ করতে এবং স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটিতে সক্রিয় হতে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় মসজিদ, মন্দির ও মাজারের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করারও আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরে সম্প্রীতি যাত্রা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় পূজা ও ওরসের সময় অতিরিক্ত পুলিশ ও দ্রুত রেসপন্স টিম মোতায়েন, উপজেলা পর্যায়ে তথ্য যাচাই টিম গঠন করে গুজবের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, থানায় অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ, মসজিদ-মন্দির-মাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপদ প্রবেশদ্বার ও জরুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জরুরি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান।
আমার বার্তা/এমই