রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর জুলাই সনদ চূড়ান্ত

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকের পর অবশেষে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের স্বাক্ষরিত চিঠিতে মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছেছে চূড়ান্ত জুলাই জাতীয় সনদ।

আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে এবং দিয়েছে নোট অব ডিসেন্ট।

যা আছে জুলাই সনদে

জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন।

জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের জায়গা।

দফাগুলো বলার আগে ‘ঐকমত্যের ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে, আমরা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা স্ব-স্ব দলের পক্ষ থেকে-

বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে নিম্নলিখিত কাঠামোগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি; এসব বিষয়কে এই জাতীয় সনদে (কিছু বিষয়ে ভিন্নমতসহ) সন্নিবেশিত করতে সম্মত হয়েছি; এবং

২০০৯ সাল পরবর্তী ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ, গ্রেফতার ও কারাবরণকারীদের প্রতি সহমর্মিতা এবং উক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে আমরা এই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হিসেবে ঘোষণা করছি।

সংবিধান সংস্কার করে বাস্তবায়িত বিষয়ের মধ্যে বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষার স্বীকৃতি, বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়, সংবিধান সংস্কারের বিধান, সংবিধান বিলুপ্তি ও স্থগিতকরণ ইত্যাদির অপরাধের অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।

সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির বদলে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করা হয়েছে।

সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের বিধান সংযুক্তি, মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, উচ্চকক্ষ ও নিম্মকক্ষের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সংশোধন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার

প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত অংশে প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকার সীমা, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধানের পদে না থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার গঠন প্রক্রিয়া, কার্যাবলি ও মেয়াদ প্রভৃতি বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে।

একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন নিয়ে ৩০টি দল ও জোট একমত পোষণ করলেও প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধানের থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্নমত ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে।

সংসদ কাঠামো

আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার ক্ষেত্রে ২৫টি রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। পাঁচটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে, তাতে ২৪টি রাজনৈতিক দল একমত হতে দেখা যাচ্ছে। আর সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে বিএনপিসহ ৭টি রাজনৈতিক দলের।

উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি ও এখতিয়ার অংশে উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা, উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব একশ জন করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।

সাংবিধানিকভাবে অস্থায়ী বিশেষ কমিটির গঠনের মাধ্যমে অনধিক ১০ বছরের পর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা অংশে।

আমার বার্তা/এল/এমই