শাহজালাল বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে বাড় বাড়ন্ত কল্পিত কিচ্ছা-কাহিনী

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিবেদক

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের মাত্র ৩০ সেকেণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসমূহ। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টির ওপর ফায়ার ফাইটিং দল নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এমনকি ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পরও বিমানবন্দরের কার্গো অপারেশন এক দিনের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। ৯ নম্বর গেট দিয়ে সচল আছে কার্যক্রম। প্রায় ৭ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় উড়োজাহাজ উঠানামাও। অথচ বিমানবন্দরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এভসেক পরিচালককে অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি অ্যাপ্রোণ এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন’র প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, বিমান বাহিনী সেদিন নিষ্ক্রিয় ছিল এমন ইত্যাকার অসত্য ও কল্পিত কিচ্ছা-কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে গুজববাজরা অস্থিতিশীল একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যে লম্ফঝম্ফ করে বেড়াচ্ছে। বিশৃঙ্খলা পাকানোর এক ট্রায়াল রান চালাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিজিও জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের কোন গাড়ি প্রবেশে সেদিন বাধা প্রদান করা হয়নি। 

প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে জীবনবাজি রেখে বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, বেবিচক, এভসেক, ফায়ার সার্ভিস ও এপিবিএন থেকে শুরু করে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে সবার সম্মিলিত প্রয়াসের অসংখ্য ভিডিও। বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা। তবুও নানা অসিলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে সার্বভৌমত্বের স্তম্ভকে দুর্বল করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। তবে কেউই অগ্নিকাণ্ডে দায়িত্বশীল কোন বাহিনীর গাফিলতি বা অবহেলার কোন রকম অভিযোগ করেননি। উল্টো আগুন নেভাতে প্রত্যেকের প্রাণপণ চেষ্টার প্রশংসা করেছেন সবাই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। ভয়াবহ এই আগুনের সূত্রপাত ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি। 

অনুসন্ধানী চোখে শাহজালালে অগ্নিকাণ্ডের সারসংক্ষেপ 
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রথম ধোঁয়া উড়তে দেখেন বিমানবন্দরের এয়ার সাইডের কার্গো গেইট সিতে দায়িত্বরত এভসেকের একজন আনসার সদস্য। তিনি তাৎক্ষণিক এভসেক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। কালবিলম্ব না করে এভসেক সুপারভাইজার বেবিচকের নিজস্ব ফায়ার ব্রিগেডকে ফোন করেন। মাত্র ৩০ সেকেণ্ডের মধ্যেই ফায়ার ফাইটার দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে বেবিচক চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এয়ারপোর্ট ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) বেঙ্গল ফায়ার, উত্তরা ফায়ার, টঙ্গি ফায়ার ও কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনকে অবহিত করে। একই সঙ্গে তিনি এপিবিএন, বাংলাদেশ আনসার ও পদ্মা অয়েলকেও অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি জানান। বেবিচকের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং দল অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা শুরুর পর বিমান বাহিনী টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এভসেক, র‌্যাব ও আনসার সবাই মিলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। টঙ্গি, কুর্মিটোলাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আসা ফায়ার ব্রিগেডসমূহ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দক্ষিণ গেইটের অদূরে বিজিএমইএ’র বেশ কিছু কার্গো নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসেন এভসেক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য এয়ার লাইন্সের সদস্যরা। 

কোন অবস্থাতেই যেন বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে আগুন ছড়াতে না পারে সেই বিষয়টিতে বাড়তি জোর দেওয়া হয়। কারণ উত্তর পাশে বিমানের মেইনটেনেন্সের হ্যাঙ্গার ও দক্ষিণ পাশে মূল টার্মিনাল ভবন ছিল। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা প্রদান করেন। উপদেষ্টার গাইডলাইনে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি তদারকি করেন। কুর্মিটোলাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে বিমান বাহিনীর ৫টি ও তেজগাঁওস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার থেকে আরও ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটও অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ লড়াই শুরু করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেপিআই এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ফায়ার ইউনিটসমূহের সব গাড়িকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। পরে নৌবাহিনীর ফায়ার ফাইটার দলও এগিয়ে আসে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, র‌্যাব ও পুলিশ বিমানবন্দরের বাইরের সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থায়ও শৃঙ্খলা নিয়ে আসে। বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ৪০টির বেশি ফায়ার ফাইটার দল প্রায় ২৬ ঘণ্টা আগুনের সঙ্গে বিরামহীন লড়াইয়ের পর সফল হয়। নিয়ন্ত্রণে আসে ইতিহাসের ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড। তবে তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বিমানবন্দরের ভেতরে থাকা যাত্রীদের নিরাপদ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এভসেক, বেবিচক ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। 

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে কুর্মিটোলায় বেবিচক সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেছেন, ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ৩০ সেকেন্ডের ভেতর আমাদের নিজস্ব ফায়ার ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশাপাশি আমরা ঢাকা শহরের অন্যান্য ফায়ার স্টেশনগুলো থেকে সহযোগিতা চাওয়া শুরু করি। ২০ মিনিটের মধ্যে বিমান বাহিনীর দুটি ঘাঁটি থেকে চারটি আগুন নেভানোর গাড়ি আসে। পরে নৌবাহিনী থেকেও একটি আগুন নেভানোর গাড়ি পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী বাইরে ক্রাউড কন্ট্রোলের দায়িত্ব পালন করেছে। পুলিশ বাহিনীও বাইরে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০টি বেশি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এই আগুন নির্বাপণে কাজ করে।’ 

শাহজালাল থেকে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে দেওয়ার গুজবের ঢোল বাজায় কারা? 
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে অরক্ষিত রেখে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পালিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা উড়োজাহাজ উঠা-নামা বন্ধ থাকে। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বেবিচকের অনুরোধে বিমান বাহিনী শাহজালালের নিরাপত্তা ও অপারেশন কার্যক্রম সচলে দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগে বিমানবন্দরটিতে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। এখন বেবিচক ও বিমান বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে সেখানে যাত্রীসেবার আমূল পরিবর্তন এসেছে। লাগেজ কাটা ও চুরি নিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ আর শোনা যায় না। যাত্রীসেবার যখন অক্ষুণ্ন রাখতে বেবিচক তৎপর ঠিক তখনই পুনরায় বিমান বাহিনীর সঙ্গে এপিবিএনকে মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চায় না বিমানবন্দরটি গত স্বৈরাচার সরকারের সময়কার চেহারায় ফিরে যাক। ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রকমের রেষারেষি বন্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে টার্মিনাল এবং এয়ার সাইড ও এপিবিএনকে ল্যান্ড সাইটে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও একই রকম নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়েই শাহজালাল থেকে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুজবের ঢোল বাজানো হয়। 

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার এবং বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মীদের সমন্বয়ে এভসেক গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিমানবন্দরটি থেকে বিমান বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। ওই বছরের ২০ জুন পতিত সরকারের ইস্যুকৃত একটি চিঠির মাধ্যমে এই অপতৎপরতা শুরু হয়। এখনও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার সেই চিঠিকেই নিজেদের অনৈতিক মতলব হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মহলবিশেষ। পরবর্তীতে গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হলে স্বয়ং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব হযরত শাহজালালের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা, অপারেশনাল কার্যক্রম সচলসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে মোতায়েনের অনুরোধ জানায়। এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে এপিবিএন বিমানবন্দরটি অরক্ষিত রেখে চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেদের চরম কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলে মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আরও একটি দল এসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে অনেক আগেই পতিত সরকারের সেই চিঠি কার্যকারিতা হারায় এবং বিমান বাহিনী শাহজালালের দায়িত্বে বহাল থাকে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। 

অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সক্রিয় ভূমিকা বিমান বাহিনীর 
শাহাজালালে অগ্নিকাণ্ডে বিমান বাহিনী হাতগুটিয়ে বা নিষ্ক্রিয় ছিল না এক মুহুর্তও। সঠিক সময়ে বাহিনীটির সদস্যরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নি নির্বাপণে জোরদার লড়াই শুরুর ফসলই ছিল মাত্র ৭ ঘণ্টার মধ্যেই উড়োজাহাজ উঠানামার কর্মযজ্ঞ শুরুর মাধ্যমে শাহজালাল সচল হওয়া। ওইদিন বিমান বাহিনীর ৮টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটের পাশাপাশি আরও অতিরিক্ত ১১০ জন সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছিল ফায়ার ফাইটিংয়ে সার্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে। অথচ নিজের পছন্দ না হলেই অন্যকে নি:শেষ করে দেওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না মহলবিশেষ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সবাইকে স্মরণে রাখতে হবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। কোন অবস্থাতেই সার্বভৌমত্বের এই স্তম্ভকে দুর্বল করা যাবে না। অযাচিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে তাদের ঘৃণ্য কায়দায় ঘায়েল করতে চাইলে আখেরে বহি:শত্রুরাই লাভবান হবে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) প্রোটোকল মেনেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, বিমানবন্দরে সপ্তাহে এক দিন ফায়ার ড্রিল (অগ্নিনির্বাপণ মহড়া) করা হয়। এমনকি আগুন লাগার পরও আইসিএওর সব নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিককে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় বেবিচকের অনুমতি না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের কাজ করতে দেরি হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তদন্ত করে দেখেছি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, কিন্তু কেউ বলেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারপর কোনো কর্তৃপক্ষ যদি এ অভিযোগ করে, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো। এ অভিযোগ যারা করছেন, সেটা সত্যি নয়।’ 

ওয়াচ টাওয়ারে বিমান বাংলাদেশের নিয়োজিত নিরাপত্তা সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করে 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকার নিরাপত্তা বিষয়ে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু উপস্থাপিত তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে সম্পুর্ণ সাংঘর্ষিক বলে জানিয়েছে বেবিচক’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র। সূত্রটি জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরের এয়ারসাইড থেকে গোডাউনে প্রবেশের মুখে অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ারে বিমান বাংলাদেশের নিয়োজিত নিরাপত্তা সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করছেন। কার্গো এলাকাসমূহে এভসেক এবং বিমান বাংলাদেশ নিয়মিত ফুট পেট্রোল পরিচালনা করে। তাছাড়াও এপিবিএনের গোয়েন্দা কার্যক্রমেও কখনও কোন বাধা প্রদান করা হয়নি। কার্গো এলাকায় এভসেক এবং বিমান বাংলাদেশ এর নজরদারি, পেট্রোলিং, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যক্রমের কোন ধরণের ঘাটতি নেই। গত ১৮ অক্টোবর কার্গো এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এয়ার সাইডে এভসেক ও ল্যান্ড সাইডে এপিবিএন যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সহযোগিতায় তাঁরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। এতে প্রমাণিত সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আন্তঃসংস্থাগত সহযোগিতা বিদ্যমান এবং সেটি ফলপ্রসূভাবে কার্যকর। এ অবস্থায় কিছু ব্যক্তি বা মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এপিবিএন ইস্যুকে সামনে এনে বেবিচক ও এপিবিএনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি ও সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এই দুর্ঘটনা-পরবর্তী সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ধরনের অপতথ্য একটি গোষ্ঠীর হীনমন্যতা এবং উসকানিমূলক প্রচেষ্টার প্রতিফলন। এটি বেবিচকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি দুঃখজনক এবং অনাকাক্সিক্ষত প্রচেষ্টা। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্ক থাকা উচিত। #

আমার বার্তা/এল/এমই