বিগত সরকার বৈষম্যবিরোধী আইন করার রাজনৈতিক সাহস দেখাতে পারেনি

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিগত সরকার বৈষম্যবিরোধী আইন করার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাহস দেখাতে পারেনি, এটি আমাদের বড় আক্ষেপের জায়গা এমন মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশে বৈষম্য মোকাবিলায় একটি আইনি কাঠামোর প্রয়োজন। আগের সরকারের সময়েও আমরা সর্বজনীন বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, খসড়াও তৈরি হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে গত বছরের আগস্টে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা উন্মোচিত হয়েছে, সেটি আমাদের উৎসাহিত করেছে। এটি শুধু কোটা আন্দোলন নয় বরং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এখনই সময় সেই চেতনাকে আইনি কাঠামোয় রূপ দেওয়া। তিনি তিনটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সেগুলো হলো বিচার, নির্বাচন ও সংস্কার।

তার ভাষায়, ন্যায্য বিচার চাইলে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তেমনি সুষ্ঠু নির্বাচন ও কার্যকর সংস্কারের ক্ষেত্রেও একটি সর্বজনীন বৈষম্যবিরোধী আইনের প্রবর্তন অপরিহার্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, যদি ন্যায্য বিচার চান তাহলে নাগরিকদের সুরুক্ষা দিতে হবে। তার মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। বিচার পাবো, ন্যায্য বিচার চাইবো কিন্তু নাগরিকের সুরুক্ষা থাকবে না, এটা হতে পারে না।। একই রকমভাবে যদি আমরা চাই নির্বাচন, তাহলে অবশ্যই এই সর্বজনীন বৈষম্যবিরোধী আইনের প্রয়োজন প্রবর্তন। এই আইনের প্রবর্তন নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বার্তাবরণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। একইরকমভাবে যারা বলেন কার্যকর সংস্কার, কার্যকর সংস্কারে প্রথিত আছে নাগরিকের অধিকার, সর্বজনীন অধিকার। এটি না থাকলে আমরা মনে করি না সংস্কার কার্যকর হবে, যোগ করেন তিনি।

তার মতে সব ধরনের বৈষম্য নিয়ে কথা বলতে হবে, এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী কথা বলবো, কিন্তু কোন কোন বৈষম্য নিয়ে কথা বলবো আর কোন কোন বৈষম্য নিয়ে কথা বলবো না এটা তো হতে পারে না। এই সর্বজনীনতা আমাদের ফিরিয়ে আসতে হবে এখানে। মানুষের সামগ্রিক নাগরিক অধিকারের ‍সুষম বিকাশের জন্য আমি তার সাংস্কৃতিক বিকাশকে বন্ধ করে দেবো শিক্ষক না দিয়ে, এটা তো হতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘নারী তার পছন্দ অনুযায়ী চলন, বলন এবং তার যে জীবনযাপনের অধিকার তার ওপরে যদি আমি খবরদারি করি তাহলে তো আমার সর্বজনীন অধিকার হলো না। যে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা তার আত্মপরিচয়ের চেষ্টার ভেতরে আছে তাকে যদি আমরা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি না দেই, ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে তারা যদি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অসহায়ত্ববোধ করে তাহলে আমার বৈষম্যবিরোধী চেতনা হলো না। অবস্থানগত কারণে কেউ উত্তরবঙ্গে থাকছে তার কাছে উন্নয়নের সুফল না পৌঁছাতে পারি; এই ছোট দেশের মধ্যেও যদি আঞ্চলিক বৈষম্য থাকে তাহলে সুষম উন্নয়ন হলো না। প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে যদি ব্যাপকভাবে সুরুক্ষা দিতে না পারি তাহলে কী বৈষম্যবিরোধী কথা আমরা বললাম।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং অর্থনীতিবিদ ড. এস আর ওসমানী।

বাংলাদেশে বৈষম্য নিরসনের আইনি প্রেক্ষাপট, বর্তমান বাস্তবতা ও করণীয় নিয়ে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

তিনি বলেন, দলিত, নারী, উর্দুভাষী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায় নানাবিধ কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিচারপ্রাপ্তি, শিক্ষা, সরকারি সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ আবাসনের ক্ষেত্রেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

সারা হোসেন আরও বলেন, বৈষম্য নিরসনের দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের নয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি জানান, সংবিধান, প্রচলিত আইন ও প্রশাসনিক আদেশে বৈষম্য নিরসনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।


আমার বার্তা/এমই