গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় দলগুলো, বাস্তব পদক্ষেপের দাবি

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চতুর্থ দিনের সংলাপ

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা। তারা ইসির প্রতি আস্থা বজায় রাখতে বাস্তব পদক্ষেপের নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইসির সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের সংলাপ করে ইসি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এক মাসও হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি চলে গেলেন—হঠাৎ করেই। আবার এক সপ্তাহের মধ্যে অনেককে রদবদল করা হয়েছে। এটার পিছনে মনে হয় যেন কোনো একটা ডিজাইন। একটা উদ্দেশ্যে এই কাজটা কোনও জায়গা থেকে হচ্ছে।”

পরওয়ার জানান, তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে আসবে। এ পরিস্থিতিতে আস্থা নিশ্চিত করতে ডিসি–এসপি বদলিতে লটারিভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা (জামায়াত)। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় পরিষ্কার কোনও সমাধান পাননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, “সবচেয়ে নিরপেক্ষ এবং আস্থা রাখার মতো একটা উপায় হলো-লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার করে দেওয়া। যার যেখানে তকদির আছে সে চলে যাবে। এটাতে কোনও কোয়েশ্চেন থাকে না।”

নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, “প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্তত  ৫ জন সেনা সদস্য থাকতে হবে। একজন সেনা সদস্য একটা ভোটকেন্দ্রে দিলে এটা খুব বেশি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব পায় না।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “জোট করলেও দল যেন নিজের প্রতীকেই ভোট করে ইসির এই সিদ্ধান্তে যেন অটল থাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানাবো। একটা সুযোগ এসেছে নিজ দল নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার। প্রতিটির দলের জন্য একজন কর্মকর্তা নির্দিষ্ট করে দিলে আমরা সহজে যোগযোগ কর পারবো। আমাদের সিরিয়াস কনসার্ন হচ্ছে, ভোটের দিন যাদের বয়স ১৮ হবে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমাদের দাবি তাদেরও ভোটার তালিকায় নিয়ে আসা। এটা করলে তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।”

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, “গণভোট কী প্রক্রিয়ায় হবে সেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানাবেন। এতে আমরা কাজ করতে পারবো। আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দিহান আছি। আপনাদের আমরা সহযোগিতা করবো। অন্যরাও সহযোগিতা করলেও আমরা একটা ভালো নির্বাচন পাবো।”

নাসিরুদ্দিন বলেন, “সময় খুবই স্বল্প, গণভোট নিয়ে সরকারের কাছে নির্দেশনা চাইতে পারেন। আমাদের নারীরা প্রতিদিন সাইবার বুলিয়ের শিকার হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করবে হবে। তরুণ প্রজন্ম যেহেতু অংশ নেবে উৎসবমুখর করতে বাহিনীগুলোকে অ্যাকটিভ করবেন। আরেকটা বিপ্লবের দিকে যেতে হলে আমাদের কারও জন্য সুখকর হবে না।”

সংলাপে প্রচারণার ক্ষেত্রে ছোট ও নতুন দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিধির বাস্তবসম্মত পরিবর্তনের দাবি জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। 

তিনি বলেন, “প্রতীক অবশ্যই স্পষ্টরূপে বড় আকারে ছাপতে হবে, বিশেষত নতুন দলগুলোর জন্য। জোট গঠন করে কোনো দল জোটগত প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে, সেই সুযোগ রাখা দরকার। এছাড়া গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা বুথ ও গণনা পদ্ধতি দরকার এবং কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও ব্যাকআপে সেনা সদস্যের নির্দিষ্ট সংখ্যা জনসম্মুখে জানানো দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি মোবাইল ফাইনান্সিং সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট লেনদেনের তথ্যও নির্বাচন কমিশনকে জমা দিতে হবে।        ইউনিয়ন/ওয়ার্ড প্রতি ফেস্টুন/পোস্টার এর সংখ্যা নির্ধারণের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করা দরকার, কারণ এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করে। এছাড়া প্রচারণার জন্য লিফলেট যথেষ্ট নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে কমপক্ষে একটি মাইক ব্যবহারের সুযোগ এবং পোস্টার/বিলবোর্ড ব্যবহারের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করা দরকার।” পাশাপাশি পোস্টার ব্যাপক ভিত্তিক ছাপা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট জায়গায় পোস্টার লাগানোর স্থান তৈরি করবে এবং দল প্রতি নির্দিষ্ট সংখ্যক পোস্টার বরাদ্দ থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের পরিপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, “ক্ষমতায় সব কিছু থাকবে সিইসির। তার ডিরেকশন, প্রজ্ঞায়, তার ক্ষমতায় একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।”

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, “ভোটের আগে ৭ দিন ও ভোটের পরে ১০ দিন সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর ইরান বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে আমরা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে একটা জায়গায় দেখতে চাই। সুন্দর র্বিাচন চই, একটা ভোট উৎসব চাই।”

বিরাজমান অস্থির পরিবেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনসানিয়াত বিপ্লব মহাসচিব শেখ রায়হান রহবার। সেক্ষেত্রে মোবাইল ডিজিটাল থাম্ব নামে একটি পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ রাখেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচনি আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্লারিফিকেশন প্রয়োজন।”

এআই অপব্যবহার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার হ্যারাসমেন্ট নিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা একটি সেল স্থাপন করছি। রাষ্ট্রীয় সক্ষমতাও ব্যবহার করা হবে। এটি একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। আমরা ভালো ইনফরমেশন দ্বারা খারাপ ইনফরমেশন ফাইট করব। ডিনাই, বেটার করা, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, সময়মতো সঠিক তথ্য তুলে ধরা—এগুলো সব কার্যক্রমের অংশ।”

পেশি শক্তি মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, “অবৈধ অস্ত্র একটি সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এবং মিশন থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭৩ শতাংশ রিকভার হয়েছে। নির্বাচনের আগে ক্রস-বর্ডার অ্যাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়। ড্রাগ এবং কিশোর গ্যাংও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৮০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেন্দ্র সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৭১টি। রিজিয়নাল রিজার্ভ, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য সংখ্যাগত সীমা রয়েছে।”


আমার বার্তা/এমই