
গত ১৫ বছর ধরে যারা দুর্নীতি করেছেন, অপরাধ করেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক অভিজাতরা কোটি টাকার বিনিময়ে তাঁদের সীমান্ত পার হতে সহায়তা করেছেন। এমন মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
আজ মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, ‘আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি ঢুকে গেছে, সেটাকে ধীরে ধীরে নির্মূল করা সম্ভব। এখনকার বাস্তবতা হলো—গত ১৫ বছরে যেসব দেশে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেছে, সেখানে আজ আমাদের কার্যকর যোগাযোগ নেই; এমনকি যোগাযোগের পথও খুঁজে পাচ্ছি না। বিদেশে আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ ‘ডার্টি মানি’ হিসেবে পড়ে আছে, আর সেসব দেশে এই অর্থ উদ্ধার বা ব্যবস্থাপনার মতো লোকবলও আমাদের নেই।’
আবদুল মোমেন বলেন, ‘আগে মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসত টাকা আসত। এখন বাস্তবতা উল্টো—বাংলাদেশ থেকে অর্থ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যায় এবং পরে কোনো না কোনোভাবে আবার দেশে ফিরে আসে। এসব লেনদেনে বিভিন্ন ধরনের ‘ইনসেনটিভও’ থাকে। এত বড় কাঠামো একদিনে, এক মাসে বা এক বছরে বদলানো সম্ভব নয়।’
রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে যারা অপরাধ করেছেন তাদের আমাদের দেশের রাজনৈতিক এলিটরা কোটি টাকার বিনিময়ে সীমান্ত পার করে দিয়েছেন। এ সমস্ত লোককে আপনারা নির্বাচিত করবেন কিনা তা চিন্তা করতে হবে। এখন সময় এসেছে—এমন লোকদের আমরা নির্বাচিত করব কি না এটা ভাবার।’
আবদুল মোমেন বলেন, ‘ভোট হলে শতভাগ লোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তারপরও দুর্নীতি দূর করা কঠিন। আগামী নির্বাচন পরবর্তী শাসন করার জন্য দুঃশাসক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী রাখলে উন্নত দেশ পাওয়া কঠিন।’ ক্ষমতাচ্যুতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের যারা সহযোগিতা করেছে টাকার বিনিময়ে তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে সব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে দুদকের যোগাযোগ নেই।’ এসব টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য সে সব দেশ ফার্স্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী শাসনামলে দুর্নীতির বিস্তার ও গভীরতা বোঝাতে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই দেশ ছেড়েছেন—পালিয়ে গেছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব—এটিই দেখায় দুর্নীতি কত গভীরে পৌঁছেছে। যদি শুরুতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যেত, তাহলে আমাদের ১৫–১৬ বছরের ভোগান্তি হতো না।’
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। সেখানে কৃষিজমির পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৫ দশমিক ২১ একর। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন যাচাই করেও তাতে সমস্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, জমি রয়েছে ২৯ একর। গাড়ির বিবরণীতেও অসংগতি পাওয়া যায়—অতিরিক্ত দুটি গাড়ি যুক্ত ছিল, যার একটি তৎকালীন এক এমপি এবং অন্যটি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নামে, যা কিনা ‘পাঁচ নম্বর সুধা সদন’-এর নামে কেনা হয়েছিল এবং সরকারের ভর্তুকিও দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘যদি তখনই এসব অসংগতি ধরা হতো, সে ক্ষেত্রে তার নমিনেশন বাতিল হতো। নমিনেশন বাতিল হলে তিনি এমপি বা প্রধানমন্ত্রী—কিছুই হতে পারতেন না। এমনকি তাঁর দল ক্ষমতায় আসত কি না সেটাও প্রশ্ন ছিল।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, দুদক মহাপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আক্তার হোসেন, আবু হেনা মুস্তফা জামান, মোকাম্মেল হকসহ দুদকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালকসহ পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আমার বার্তা/এমই

