ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি হওয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবে কমিশন। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের ভাষণ রেকর্ড করা হবে। 

তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। সব ঠিক থাকলে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে ১২ ফেব্রুয়ারি।

আগামী ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারির যেকোনো দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে কমিশন জানায়, ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট হবে। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছিল ইসি। সেখান থেকে সরে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দিনটি বৃহস্পতিবার। ভোট গ্রহণের পর ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ভোটের পরের দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন। এ জন্য ১২ ফেব্রুয়ারিকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলে আসছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ঈদ উৎসবের মতো। ফলে এবারই প্রথম ভোটের আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে। পরের দুই দিন ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি তফসিল ঘোষণা করবেন। আজ সেই ভাষণ রেকর্ড করা হবে। আর নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, তফসিল ঘোষণায় ভাষণের সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আজ সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সূত্র জানায়, সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিটিভির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়েছিল। আজ দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কমিশন। এরপর সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে আজ বিকেলেও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, মনিটরিং সেল এবং আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক সেল গঠনের সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর ধারাবাহিকভাবে এগুলো জারি করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ ভোটের সঙ্গে গণভোটের ঘোষণা আসায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানো এবং বাজেট বাড়ানোর বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে কমিশনকে। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনবিধি সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, অধিকাংশ ছাপার কাজ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সব বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও হয়েছে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় ভোট দিতে একজন ভোটারের কত সময় লাগবে, সেই ধারণা নিতে গত ২৯ নভেম্বর ভোটের মহড়া করে ইসি। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভোটের সময় ১ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে প্রতিটি উপজেলায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এরপর ভোটের পাঁচ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে পোস্টার সরাতে। এ সময়ের মধ্যে পোস্টার না সরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি ও আধা সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের এসব পদে দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

একই দিন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এবং গতকাল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি। রেওয়াজ অনুযায়ী, আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসির তফসিল ঘোষণার ভাষণ রেকর্ড করা হবে।

তফসিলের পর বেআইনি জনসমাবেশ করলে কঠোরভাবে দমন

তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর হয়—এটিই সরকারের মূল লক্ষ্য। এ কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাঁরা বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচনমুখী সময়ে আছি। এ কারণে, সবার যা কিছু দাবিদাওয়া আছে, তা নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আশা করব, এ সময়ের মধ্যে কেউ দাবিদাওয়া নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবেন না।’


আমার বার্তা/এল/এমই