গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

নির্বাচন ক্রমান্বয়ে একটি অবধারিত বিষয়ে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে শঙ্কা দূর করে মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নির্বাচন হবে—বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই শঙ্কা এখনো কাটছে না। প্রধান উপদেষ্টা ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন করে দেখানোর কথা বলেছেন, যার অপেক্ষায় সবাই।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক্‌-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকার একটি হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভা শেষে প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনের পক্ষে প্রায় সবাই আছেন। রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাগরিক সম্প্রদায়, সেনাবাহিনী, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও নির্বাচন চায়। তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার বিষয়ে যে শঙ্কা, তা দূর হচ্ছে না।

আজ আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় চট্টগ্রামের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নারী অধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সুষ্ঠু নির্বাচন, প্রয়োজনীয় সংস্কার, দুর্নীতির দমন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিসহ নানা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন অংশগ্রহণকারীরা।

সভার আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ টেনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকেরা সুশাসন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি, আইনের শাসন, নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন। সবাই একটি দক্ষ প্রশাসন, একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং একটি নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চায়। এই দাবিগুলো রাজনীতিবিদেরা তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারের ভেতরে কীভাবে স্থান দেবেন, তা জানার জন্য নাগরিকেরা অপেক্ষায় আছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেড় বছর ধরে দেশে এত সংস্কারের আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়ে কোনো বড় আলোচনা হয়নি। রাজনীতিবিদ, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—কারও তরফ থেকেই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যায়নি। চট্টগ্রামেও রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রায়ণ, দুর্নীতিমুক্ত থাকা এবং জবাবদিহির দাবিটি খুব বড়ভাবে এসেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে সামনে আনা এবং তাঁদের পরিবারের আত্মীয়স্বজনের সহায়সম্পত্তির বিষয়টিও ঘোষণার দাবি উঠেছে। বিগত ও বর্তমান সরকার তাদের মন্ত্রিপরিষদের বা সরকারপ্রধানের সম্পত্তির হিসাব দেবে—এমন ঘোষণা দিলেও তা পরিপূরণ না করায় মানুষের মধ্যে অনেক বড় হতাশা রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ব্যর্থতা আগামী সরকারকেও তা না করার ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়ে গেল কি না।

এর আগে পরামর্শ সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, নাগরিকদের অধিকারসচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের জবাবের মুখোমুখি করতে হবে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে সভায় জানান ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাওয়ার সময় মবের শিকার হব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’


আমার বার্তা/এমই