পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্রে রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনার আহ্বান

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

ওয়ান হেলথ বিষয়ক সেমিনার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হলে তার চূড়ান্ত মূল্য সমাজকেই দিতে হয় বলে তিনি সতর্ক করেন।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত “ওয়ান হেলথ কার্যক্রম: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কৌশল” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাস্তা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হলেও একটি সুন্দরবন বা একটি নদী নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও পরিবেশগত সংকট প্রমাণ করে—প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং মানুষ প্রকৃতির মালিক নয়, বরং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ওয়ান হেলথ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াগত জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা কাটাতে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে কার্যকর পরামর্শক কমিটি গঠন এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণের ওপর তিনি জোর দেন।

তিনি জানান, জনবল বৃদ্ধি, অনলাইন প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ এবং পরিকল্পনা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো সম্ভব। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের বড় অংশ সময়ই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যয় হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কার্যকর নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ওয়ান হেলথ কেবল একটি কারিগরি কাঠামো নয়; এটি একটি সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিষয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রকৃতিনির্ভর উন্নয়নের গুরুত্ব সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত না হলে কোনো উন্নয়ন উদ্যোগই টেকসই হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতিগত সংস্কার ও কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে ওয়ান হেলথ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।

সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জনস্বার্থ সুরক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; ড. ফারহিনা আহমেদ, সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মো. সাইদুর রহমান, সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ; ড. মো. আবু সুফিয়ান, মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর; অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, পরিচালক, আইইডিসিআর; এবং মো. জাহিদুল কবির, উপপ্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও মতামত তুলে ধরেন।


আমার বার্তা/এমই