নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি আলেম-রাজনীতিকদের
ইসলামবিদ্বেষী-জনবিচ্ছিন্ন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে ইসলামবিদ্বেষী ও জনবিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান এবং অবিলম্বে কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে আলেম ও রাজনীতিকরা।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে “নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলাম ফোবিয়া : করণীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানান তারা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতা, বুদ্ধিজীবী ও আলেমসমাজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল পরিষ্কারের লক্ষ্যে যে সামগ্রিক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা জনসমর্থন পুষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বটে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতো কিছু কমিশন জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
বক্তারা বলেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ এমন, যা পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারী সমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবন সংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। নারীপাচার, যৌন নিপীড়ন ও দারিদ্র্যজনিত কারণে যারা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কমিশন বরং এই ব্যাধিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীর জন্য অভিশপ্ত জীবনকে আইনি বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।
বাংলাদেশের পারিবারিক আইন বহুদিন ধরে ধর্মভিত্তিক। যেমন মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের মতো বহু দেশেই প্রচলিত। এই আইনের মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং তা নিয়ে কোনো বড় অসন্তোষও সমাজে নেই। অথচ নারী কমিশন এই ধর্মীয় ভিত্তিকে বাতিল করে নতুন আইনের নামে ধর্মহীন পরিবার কাঠামো চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা ধর্মবিশ্বাসী জনগণকে উত্তেজিত করে ভারতের বিজেপির সাম্প্রতিক সামাজিক বিভাজনের কৌশলের অনুকরণ করছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, নারীর জন্য কল্যাণকর প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। অথচ কমিশন যে ভাষায় ও যুক্তিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তা পশ্চিমা দর্শনেরই বিকৃত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের নারীরা এ ধরনের ভাষা ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না। বক্তারা প্রশ্ন করেন, সরকার যে নারীদের কল্যাণে কমিশন গঠন করেছে, সেখানে কীভাবে সবাই একমুখী, ইসলামবিরোধী এবং পাশ্চাত্য চিন্তায় প্রভাবিত হলো?
বক্তারা আরও বলেন, এই প্রস্তাব জনরোষ উস্কে দেবে এবং এর সুযোগ নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একটি গণ-আন্দোলন নির্ভর সরকারকে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কমিশন বিপদে ফেলবে। সেমিনারে আলোচকরা এই কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে কমিশন বাতিলের দাবি জানান এবং দেশের নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী দিনদার, শিক্ষিত ও সমাজসচেতন নারীদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।
সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে দাবিগুলো হলো :
১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে।
৩. নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতা।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন— জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহদি, জনপ্রিয় ইসলামিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা রুহুল আমীন সাদি (সাইমুম সাদী), মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস(জামেয়া ইসলামিয়া কুতুবখালি) মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও তর্কবিদ মুফতি আবু মুহাম্মাদ রাহমানি হাফি, শরিয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতী লুতফুর রহমান ফারায়েজি।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, হাফেজ আব্দুল বাসিত আল হাসসানি, মাওলানা হানজালা, শায়খ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক হাফি, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই