সাম্য হত্যার বিচারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ১৭:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের অবস্থান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের তথাকথিত ‘আইওয়াশ’ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, হত্যার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, তদন্তে নেই কোনো স্বচ্ছতা বা দৃশ্যমান অগ্রগতি।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ৯টা থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও শাহবাগ মোড় অবস্থান নেন ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীরা। এ সময় নেতারা স্পষ্টভাবে বলেন, কেবলমাত্র লোক দেখানো গ্রেপ্তার নয়, চাই প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি। অন্যথায় আন্দোলন জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রয়োজনে ‘যমুনা ঘেরাও’ কর্মসূচিতে যাওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

শাহবাগ মোড় অবরোধকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়—‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘কে বলে রে জিয়া নাই, জিয়া আছে বাংলায়’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’।

ছাত্রদল নেতারা জানান, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। পাশাপাশি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনেও অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমরা এখনো পর্যন্ত সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিদের, যারা অপরাধস্থলে উপস্থিত ছিল—তাদের গ্রেপ্তার হতে দেখিনি। আমাদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো অগ্রগতি দেখানো হয়নি। ৯ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো ফলাফল নেই। প্রশাসন বলেছে, সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরা নাকি অকেজো ছিল। এ থেকেই বোঝা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা রাজনীতিকরণ করছি না, আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচারের দাবিতে এসেছি। ইন্টারিম সরকারও বিমাতা-সুলভ আচরণ করছে এবং তারা কেবল চেয়ার উপভোগ করছে। তাদের বক্তব্য ও অবস্থানে আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বিনষ্ট হতে দেখছি।’

রাকিব আরও বলেন, ‘সাম্যের জানাজায় অংশ নেওয়ার সময় শিবিরের কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের কোনো অবস্থান নেই। তারা মোহাম্মদপুর আর্টস কলেজ ইস্যু নিয়েও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তারা বারবার প্রমাণ করেছে, তারা মুনাফেক এবং তারা বলে তাদের দিয়ে নাকি ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে। এ কারণেই তারা ১৯৭১ সাল থেকে বারবার তারা পরাজিত শক্তির পক্ষ নিয়েছে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর আলম ভূঁইয়া ইমন বলেন, ‘সাম্য ফ্যাসিস্টদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর আজও প্রশাসন প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ জানাব এবং ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতেও আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘ছাত্রজনতার ঐক্য অটুট রাখতে উপাচার্য যে ব্যর্থ হয়েছেন, তা সাম্যের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা, তোফাজ্জল হত্যা, শেখ হাসিনার মোটিভ পোড়ানো, শহীদ মিনারের সামনে গণিত বিভাগে লাশ পাওয়া—এসব ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই আজ সাম্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রশাসনকে আরও সজাগ হওয়ার আহ্বান জানান।

ছাত্রদলের ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী শেখ বলেন, ‘আইওয়াশ করার জন্যই ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা প্রেস ব্রিফিং আমরা দেখিনি। আমরা জানি না, আসলে হত্যার পেছনে কারা ছিল। যদি এ হত্যাকাণ্ডের যৌক্তিক ও স্বচ্ছ ফলাফল না আসে, তাহলে আমরা জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে আমরা যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করব।’

শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হলেও পাশের কিছু সড়ক খোলা থাকায় সেসব পথে রিকশাসহ কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী যানবাহনের চলাচলে ছাড় দেওয়া হয়েছে।


আমার বার্তা/এমই