বিতর্কিত ৩ নির্বাচন তদন্তে যেসব বিষয়ে সতর্ক করলেন বিশ্লেষকরা

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন মাসের মধ্যে এসব নির্বাচন নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এবং ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিয়মের কোন পর্যায় পর্যন্ত এই কমিটি তদন্ত করবে তা সুস্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগ আমলের তিন নির্বাচনে অনিয়ম করা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নির্দোষ কেউ যাতে অপরাধী না হয়ে যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তারা।

২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত। দশম জাতীয় নির্বাচনকে বিনাভোটের- বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন বলা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বলা হয় ডামি নির্বাচন।
 
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এই তিনটি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করাসহ, নির্বাচনগুলো নিয়ে তদন্ত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এরইমধ্যে সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালকে এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
 
অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৬ জুন বিগত তিনটি নির্বাচন নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে। কমিটিতে সাবেক আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের অভিযোগ তদন্ত করে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় পর্যালোচনা করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সুপারিশ তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরবেন।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলের দায়ও মূল্যায়ন করতে হবে- প্রশ্নবিদ্ধ এসব নির্বাচন আয়োজনে।
 
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন,
শুধু সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। আইনের কোথায় ত্রুটি, আচরণের কোথায় ত্রুটি, সরকারের কোথায় ত্রুটি আছে-এসব দেখতে হবে। কারণ কেন বিরোধীদল এত ব্যাপক হারে নির্বাচন বয়কট করল, এ রকম ব্যাপক হারে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তের নজির বিশ্বের কোথাও আছে বলে জানা নেই।

 
অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমে বলেন, সাবেক সিইসিদের বয়ান এই কমিটির শোনা উচিত। দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা বের করতে হবে।
 
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সামনে সরকারের নির্দেশ লঙ্ঘন করার কোনো অপশন ছিল কি-না, সেই অপশন তারা কাজে লাগাতে পারলো না কেন-এসব বিষয় দেখা উচিত।’
 
আর নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খান বললেন, নির্বাচন আয়োজনে যুক্ত কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যন্ত তদন্ত হবে তা নিয়ে কিছু বলা নেই।
 
মুনিরা খান বলেন, তারা কি নির্বাচন কমিশনে যারা বসে আছেন, শুধু তাদেরই বিচারের আওতায় আনবেন? প্রিসাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা যারা দেখেছেন-তাদের সবাইকেই কি বিচারের আওতায় আনা হবে? এ কয়টা দিনে তারা তদন্ত করে তারা কতটুকু বের করতে পারবে? তবে একটা জিনিস আশা করবো, নির্দোষ কাউকে যেন দোষী করা না হয়।  

তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে কমিটিকে সঠিকভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে আবারও হারাবে ভোটের স্বচ্ছতা।

আমার বার্তা/এল/এমই