শিক্ষকদের জন্য কমিশন গঠন করবে বিএনপি: তারেক রহমান
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা, চাকরির স্থায়ীকরণ ও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট’ আয়োজিত এক সমাবেশে ভিডিও বার্তায় তিনি এই ঘোষণা দেন।
তারেক রহমান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রে শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্মান জড়িত। দুর্নীতিবাজরা বিত্তবান হলে সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, আর শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকলে সমাজ শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়।
রাষ্ট্র এবং সমাজে দুর্নীতি নামক ব্যাধি রয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো, চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করব।
তারেক রহমান বলেন, অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন আর খারাপ দৃষ্টান্তগুলো বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি সমৃদ্ধ, সুন্দর, নিরাপদ, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নই হোক আমাদের এই সময়ের অঙ্গীকার।
বিশ্ব এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে সমান ও মর্যাদার সঙ্গে একটি প্রভাবশালী জাতিরাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকাই আমাদের সামনে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অর্থ-বিত্তে, মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ। দেশের শিক্ষকগণই হচ্ছেন জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র-সমাজ গড়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতিয়ার যদি দুর্বল হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। শিক্ষক সম্পর্কে জগৎবিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি কথা তিনি মনে করিয়ে দেন: তিনি বলেছিলেন— ‘সৃষ্টিশীল প্রকাশ এবং জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা হলো শিক্ষকের সর্বপ্রধান শিল্প'।’
প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি, এমপিও কিংবা নন-এমপিও সব মিলিয়ে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমবেশি সম্ভবত প্রায় ৯৫ হাজার বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এরমধ্যে সম্ভবত সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। জনসংখ্যার তুলনায় দেশের বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই সংখ্যাকে হয়তো বেশি বলা যাবে না। কিন্তু সবাই মিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত করতেই হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঁথিনির্ভর না রেখে শিক্ষা কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকেই ব্যবহারিক এবং কারিগরি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার বিকল্প নেই। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
তারেক রহমান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারেন, সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রণয়নে বিএনপি বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বিএনপির কর্মপরিকল্পনায় শিক্ষকদের আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি। দেশের শিক্ষক সমাজের, বিশেষ করে স্কুল-মাদ্রাসা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সম্মান সুসমুন্নত করে শিক্ষকতা পেশাকে সুযোগ এবং সম্মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমি আগেও বলেছি, শিক্ষকতা পেশা কখনোই ‘উপায়হীন বিকল্প’ কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতো হতে পারে না। বরং, শিক্ষা-দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্মজীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, বিএনপি শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা এবং উপায় নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। নৈতিকতা এবং ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং সরকারের উন্নয়নে বিএনপির গৃহীত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। প্রয়োজন দেশের সবচেয়ে সচেতন অংশ— শিক্ষকদের সমর্থন। একটি জ্ঞান ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং সহায়তা চায়। বিএনপি সম্মানিত শিক্ষক-কর্মচারী ভাই-বোনদের আন্তরিক সহযোগিতা চায়।
আমার বার্তা/এমই