আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হ‌বে কি না স‌ন্দেহ তৈ‌রি হ‌য়ে‌ছে: রিজভী

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে কি না সন্দেহ আছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সামগ্রিক স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে কি না, কারিগরি হবে কি না, কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজবাড়ী সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলা বাড়িয়া গ্রামের জন্মান্ধ গফুর মল্লিকের (৭৯) বাড়িতে গিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষর হলো, যখন স্বাক্ষর করেছে সব রাজনৈতিক দল, সেই স্বাক্ষরের কাগজটি চূড়ান্তভাবে জামা দিলেন ঐকমত্য কমিশনের যারা দায়িত্বে আছেন তাদের কাছে। কিন্তু দেখা গেল সেখানে বিএনপি যে পাতা স্বাক্ষর করেছে, সেটা নেই। অন্য পাতা সেখানে যুক্ত হয়েছে। এটা দুঃখজনক কথা। এটা জাতির সাথে প্রতারণার শামিল।

তিনি বলেন, আমরা ড. ইউনূস সাহেবকে সবাই সম্মান করি, তিনি একজন গুণীজন। তার নেতৃত্বে যে সরকার তাকে তো বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব দল সমর্থন করেছে। তার গঠন করা বিভিন্ন কমিশনের মাঝখান থেকে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ হবে সেটা মানুষ আশা করে না।

রিজভী বলেন, দেশ এক ভিন্ন রকম পরিস্থিতির মধ্যে অতিক্রান্ত হচ্ছে। একটা পরিস্থিতি গেছে সেটা হলো ফ্যাসিবাদী আমল। গুম খুনের আমল। বিরোধী দলের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার আমল। একটি রাজনৈতিক দলের ভয়ে কেউ জোরে কথা বলতে পারেনি। ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশের আমল ছিল শেখ হাসিনার আমল। ১৬ বছর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এক আপসহীন সংগ্রাম করা হয়েছে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, মুক্ত কণ্ঠে আমাদের মিছিল করার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লড়াই করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যখন অসুস্থ করা হলো, বন্দি করা হলো, তার যখন চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হলো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হলো, কারাগারে নেওয়া হলো, তখন তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বিজয়ের পথকে সুগম করেছেন। ৫ আগস্ট সেই ভয়াবহ রক্ত পিপাসু শেখ হাসিনার পতন হয়। মানুষ চেয়েছে তার স্বাধীনতা, অধিকার প্রয়োগ করতে। শেখ হাসিনার আমলের চেয়ে একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন।

রিজভী বলেন, জুলাই সনদে ৪৭-৪৮টি ধারা রয়েছে, তার মধ্যে কিছু ধারা আইনি করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখন আছে এক কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, দ্বিকক্ষ করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যে প্রস্তাবগুলো আছে এতে সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন করে নতুন সংবিধান করবেন, না সংবিধানের নিয়ম স্বাধীনতার পর জনগণ ও সমাজের তাগিদ অনুযায়ী সেটা সংশোধিত হতে হয়। এটা আমেরিকা, ভারতে হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা করতে হবে। কিন্তু ২৭০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট গঠনের পর পাস না হলে সেটা অটোমেটিক পাস হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা নেই, এককেন্দ্রিক, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী দেশে সম্ভব। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কী দরকার, গণভোট কী দরকার। সত্যিকার গণতন্ত্রের জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আহনাফ, ওয়াসিম আকরাম জীবন দিল, তারপরও ঐকমত্য কমিশন এ ধরনের ভেজাল, জনগণের সঙ্গে একটি প্রতারণামূলক জুলাই সনদ কীভাবে হয়। নতুন সংবিধান করতে চান, সেটা অন্য জিনিস। জুলাই সনদে, সংবিধানের মধ্যে যেটা করা হয়েছে, সেটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস করতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা নিরাশাবাদী নই, আমরা আশাবাদী। জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, সংবিধান অনুযায়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ আসলে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন তারা করেন, বাকাশাল করেছেন, সমস্ত দল তারা নিষিদ্ধ করেছেন, সংবাদপত্র নিষেধ করেছেন। সেটি জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আসলেন তখন আবার সংশোধন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবাধ করে দিয়েছেন। গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। যে সংবিধানের মধ্যে আল্লাহর নাম ছিলো না জিয়াউর রহমান সেখানে আল্লাহর নামও সংযোজন করলেন। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযুক্ত করলেন সেখানে। তিনি সংবিধানে বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছিলেন, যেটি শেখ হাসিনা মুছে দিয়েছেন।

রিজভী বলেন, এবার আপনারা এইচএসসির রেজাল্ট দেখেছেন। ফলাফলের কী অবস্থা। আগে খাতায় না লিখলেও পাস করিয়ে দেওয়া হতো, জিপিএ-৫ দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেত তখন দেখা যেত তারা কিছু লিখতে পারে না। এবার মেধা ও প্রস্তুতির প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি নজর দেওয়া দরকার ছিল। কারণ আড়াই শতাংশেরও বেশি ছাত্র ছাত্রী যাদের আরও ভালো রেজাল্ট করার কথা ছিলো তারা করতে পারেনি। খাতা ভালো মতন দেখা হয়নি। খাতা ভালো মতো না দেখার কারণে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর রেজাল্ট ভালো হয়নি। এটা একটা ক্রাইম। 

এ অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, রাজবাড়ী-১ আসনের ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আসলাম মিয়া, রাজবাড়ী-২ আসনের ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


আমার বার্তা/এমই