জামায়াত আমীরকে রিজভী
জেনোসাইডের হুমকি জনগণ ভালোভাবে নেবে না
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

জামায়াতে ইসলামীর আমীরের এক বক্তব্যকে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জেনোসাইড শেখ হাসিনা করার চেষ্টা করেছে। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী জেনোসাইড করেছে। আপনি জেনোসাইডের হুমকি দিচ্ছেন, এটা তো জনগণ ভালোভাবে নেবে না। আপনি তো খুব বিপজ্জনক কথা বলেছেন। এ বিষয় নিয়ে আমি পুরো জাতিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রোববার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গণতন্ত্রে উত্তরণে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘জামায়াতের আমীর বলেছেন নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে হলে নাকি জেনোসাইড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি এটা বলে কি গোটা জাতিকে হুমকি দিলেন? জেনোসাইড হবে কেন? আমরা তো জেনোসাইড বন্ধ করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বিপুল মানুষ নিজের জীবন দিয়ে একটি রক্তপিপাসু সরকারকে সরিয়েছে। আপনি এই আশঙ্কা করলেন কেন? আপনি তো একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। আপনি প্রচুর গণহত্যার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এটা তো একটা আতঙ্ক তৈরি করছেন।’
‘আপনারা চাচ্ছেন গণভোট যাতে আগে হয়। বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল বলেছে আগে যদি গণভোট করা হয় তাহলে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। গণভোট এবং নির্বাচন একদিনে করলে ভালো হবে। এই ডিবেটটা চলছে। গণতন্ত্র মানেই তো হচ্ছে ডিবেট এবং ডিসকাশন। কিন্তু আপনি সেখানে জেনোসাইডের ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন! আপনি একটি রক্তগঙ্গা বইবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন! এটা তো ভয়াবহ ব্যাপার। জেনোসাইড শেখ হাসিনা করার চেষ্টা করেছে। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী জেনোসাইড করেছে। আপনি জেনোসাইডের হুমকি দিচ্ছেন, এটা তো জনগণ ভালোভাবে নেবে না। আপনি তো খুব বিপজ্জনক কথা বলেছেন। এ বিষয় নিয়ে আমি পুরো জাতিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে ধারাবাহিকতা ছিল, সেটা আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এখন আমাদেরকে সেটা করতে হবে। এখন যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, তাহলে এই দেশ এবং আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়ব যে— আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সংকটের মুখে পড়বে।
‘দেশ কিভাবে চলবে, সেই শাসন নিশ্চিত করবে জনগণ। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই ঠিক করবে তাদের প্রতিনিধি কে হবে। সেই নির্বাচনটা হতে হবে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। এটা ছাড়া গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হবে না।’
এআই দিয়ে বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন বক্তা বক্তব্য রাখলেন, কিন্তু আরেকজন সেটা মানতে পারল না। পরে সে এআই দিয়ে সেটাকে বিকৃত করে, অশ্লীল ও অশ্রাব্য কথা ব্যবহার করে। আপাত দৃষ্টিতে এটা ফানি মনে হলেও, কিন্তু এটা কিন্তু গণতন্ত্র না। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরেকটা আক্রমণ। সমাজ এবং রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এআই ব্যবহার করা হচ্ছে।’
জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতার বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘আজকে একটি রাজনৈতিক দলের একজন বললেন যে, তাদের কথায় প্রশাসন উঠবে এবং বসবে। এটা গণতন্ত্রের কোনো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নেই। এই কথার মাধ্যমে আপনি তো আরেকটা দানবীয় শাসন তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন। আরেকটা শেখ হাসিনা এবং আরেকটা ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। শেখ হাসিনা পুলিশকে বানিয়েছে ছাত্রলীগ, র্যাবকে বানিয়েছে যুবলীগ এবং তারা গুম-খুন করে আনন্দিত হতো। যারা ক্যাডার-ভিত্তিক দল করে, তারা প্রশাসন-বিচার বিভাগ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ক্যাডার বসানোর চেষ্টা করে। এটাই হয় গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।’
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই
