কথা রাখলেন খালেদা জিয়া, দেশের মাটিতে স্বামীর পাশে চিরনিদ্রায়
মহাকাব্যিক শেষবিদায়
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন রাজনীতির প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ মহাযাত্রার ঘটল মহাসমাপ্তি। জীবনভর যিনি ছিলেন দৃঢ়তা ও প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি, মৃত্যুতেও তিনি রেখে গেলেন নিজের কথার অটল সাক্ষ্য।
একদা বলেছিলেন, এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। সেই উচ্চারণ ছিল শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, ছিল জন্মভূমির প্রতি গভীর দায়বদ্ধতার ঘোষণা। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিজ্ঞাই অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করলেন তিনি। লাল-সবুজের পতাকার সার্বভৌমত্বকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশের মাটিতেই ত্যাগ করলেন শেষ নিঃশ্বাস, আর এই মাটিতেই শায়িত হলেন চিরনিদ্রায়।
রাজনৈতিক জেল-জুলুম থেকে বাঁচার জন্য দেশ ছাড়েননি কখনোই। বারংবার সে সুযোগ আসলেও প্রত্যাখান করেছেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে যিনি আপসহীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, তিনি প্রমাণ করে গেলেন যে প্রতিজ্ঞা কেবল কথায় নয়, জীবনের শেষ মুহূর্তেও ধারণ করা যায়।
লাখো নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চোখের জলে ভাসিয়ে তিনি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করলেও রয়ে গেলেন কোটি মানুষের হৃদয়ের গভীরে। রাজপথের আন্দোলন, সংসদের বিতর্ক, কারাবন্দিত্ব, অসুস্থতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তিনি পরিণত হয়েছেন এক অনন্ত ইতিহাসে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের ঢলই বলে দেয়, জনমানুষের বুকে বেগম খালেদা জিয়া কতটা গভীরভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। নীরব সেই জনস্রোত যেন শব্দহীন ভাষায় জানিয়েছেন একজন রাজনীতিক নয়, বিদায় নিচ্ছেন এক যুগের প্রতিনিধি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে খতিবের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা নামাজ। রাষ্ট্র, দল ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত শ্রদ্ধায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ।
জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তিন বাহিনীর সদস্যদের কাঁধে করে তাকে নেওয়া হয় জিয়া উদ্যানে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে বড় পুত্র তারেক রহমান নিজ হাতে শায়িত করেন তার মা বেগম খালেদা জিয়াকে।
এরপর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সেখানে প্রদান করেন গার্ড অব অনার। বন্দুকের নীরব সালাম, পতাকার ভাঁজ, আর স্তব্ধ আকাশ—সব মিলিয়ে রাষ্ট্র যেন শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানায় তার এক সাবেক সরকারপ্রধানকে।
মাটির নিচে ঘুমিয়ে পড়লেও বেগম খালেদা জিয়া রয়ে গেলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে, মানুষের স্মৃতিতে, আর আপসহীনতার এক অনন্য প্রতীকে।
আমার বার্তা/এমই
