বিশ্ব এইডস দিবস আজ

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিবেদক

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব এইডস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘অসমতা দুর করি, এইডস মুক্ত বিশ্ব গড়ি’। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে র‌্যালি, জনসচেতনতামূলক আলোচনাসভা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে, এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৩ বছরে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ঘাতক ব্যাধি এইডসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।

বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার ইউনিসেফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই স্থবিরতাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনিসেফের শিশু, এইচআইভি ও এইডস সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈশ্বিক স্ন্যাপশট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার শিশু ও কিশোর-কিশোরী (০-১৯ বছর বয়সী) এইডসজনিত কারণে মারা গেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ লাখ ১০ হাজার। ফলে ১৯ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখে উন্নীত হয়েছে।

বিশ্ব এইডস দিবসকে সামনে রেখে ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতী নারীদের এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গত ৩ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখনো অনেক অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগের পর্যায়ের চিকিৎসা সুবিধা ফিরে আসেনি। প্রতিদিন ৩ শতাধিক শিশু ও কিশোর-কিশোরী এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সহযোগী প্রধান আনুরিতা বেইনস বলেন, ‘যদিও এইডসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কম প্রাধান্য পাচ্ছে, তবুও গত ৩ বছরে এ বিষয়ে যে স্থবিরতা দেখা গেছে, তা নজিরবিহীন। ফলে অনেক কম বয়সী মানুষ নতুন করে অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছে।’

২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, এইচআইভি আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মাত্র ৭ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করলেও শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা এইডসজনিত কারণে মৃত্যুর ১৭ শতাংশ ও নতুন করে আক্রান্তের ২১ শতাংশের জন্য দায়ী।

ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এইডস নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় হবে। এইচআইভি আক্রান্ত শিশুর মোট সংখ্যা কমে গেলেও, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের আওতার মধ্যে থাকা চিকিৎসা সুবিধার ব্যবধান বাড়ছে। এই ব্যবধান সৃষ্টির পেছনে মূলত দায়ী করোনাভাইরাস মহামারি ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকট।

এদিকে, গত এক বছরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (এআরটি) সেন্টার থেকে খুলনাসহ ১০ জেলায় ৬৫ জনের এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায়। এই পজিটিভে কোমলমতি শিশুরা রয়েছে তিনজন। এর মধ্যে দুই জন খুলনার ও অপর একজন যশোর জেলার বাসিন্দা। একই সময়ে মরণব্যাধি এই রোগে মৃত্যু হয়েছে পুরুষ ও মহিলাসহ ১৮ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। সে খুলনাঞ্চলের বাসিন্দা। খুমেক হাসপাতালে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৫৮ এইচআইভি পজিটিভ রোগী নিয়ে এআরটি কর্ণার এর যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ৫১৫ জন আইডিভুক্ত এইচআইভি পজিটিভ রোগী আছে। এর মধ্যে ৪১০ জন রোগী নিয়মিত এআরভি গ্রহণ করছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ২২১ নং রুমে এআরটি (অ্যান্টি রেক্ট্রোভাইরাল থেরাপী) সেন্টারের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক বছরে (২০২১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত) ৯২৩ জনকে এইচআইভি/এইডস পরীক্ষা করে নতুন করে তিন শিশুসহ ৬৫ জনের শরীরে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত করা হয়। শনাক্তের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও মহিলা ২৯ জন ও শিশু রয়েছে ৩ জন। এদের মধ্যে শিশু (কন্যা) দুইজন ও (পুরুষ) একজন রয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ১০ ও মহিলা ৭ জন ও শিশু (পুরুষ) একজন। শনাক্তের মধ্যে খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মাগুরা, ঝালকাঠি, চাঁদপুর ও বরিশালের বাসিন্দারা রয়েছে। এইডস শনাক্তে ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে খুলনাঞ্চল। যা গত তিন বছরের তুলনায় এবছরে খুলনায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: কাইয়ুম তালুকদার বলেন, বাবা-মায়ের ভুলের কারণে কিংবা অন্যদের সামান্য অসচেতনার কারণে কোমলমতি অনেক শিশুই বহন করে চলেছে ভয়াবহ এইচআইভি/এইডস জীবাণু (পজেটিভ)। বর্তমানে এই হাসপাতালে গর্ভবতী কোন মহিলা সিজার করা হলে তাকে বাধ্যতামুলকভাবে এইচআইভি/এইডস পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া এইচআইভি/এইডস পজিটিভ রোগীদের বিনামূল্যে অনেকদামি ওষুধ দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, ভয়াবহ এইডসের ঝুঁকিতে এখন সিরাজগঞ্জ। উদ্বেগজনক হারে এ জেলায় বাড়ছে এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৫৫ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ৬ মাসে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা ৪২ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ১৩ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে।

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এইচ টি সি এ আরটি সেন্টারের কাউন্সিলর এ্যান্ড এ্যাডমিনিস্টিটর মাসুদ রানা গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ থেকে সিরাজগঞ্জে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৭জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে।

তিনি জানান বিগত বছরের তুলনায় এবছর পজিটিভ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। পজিটিভ রোগীর বেশীর ভাগই ইনজেকটিভ মাদক গ্রহণকারী। এরা মাদক গ্রহণের সময় সুচ এবং সিরিঞ্জ শেয়ার করে এজন্যই পজিটিভের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সচেতনতা এবং বেশীরভাগ মানুষকে যদি এইচআইভি পরীক্ষার আওতায় না আনা যায় তাহলে সিরাজগঞ্জে এইডস মহামারি আকার ধারণ করবে। এখানে পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম তার মধ্যে যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের ৫০ ভাগই পজিটিভ হচ্ছে।

এবি/ জিয়া