বিস্ফোরণের ঘটনায় ধোয়াশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  বশির হোসেন খান

# এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সে বিষয়ে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ উপ-কমিশনার (ডিসি) রমনা বিভাগ, ডিএমপি
# অসাবধানতাবশত ফেলে দেয়ার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটে: মো. আসাদুজ্জামান, সিটিটিসি প্রধান, অতিরিক্ত কমিশনার, ডিএমপি 
# বোম ডিস্পোজাল ইউনিট স্প্রিন্টারগুলো পরিক্ষা-নিরীক্ষা করছে: হারুন-অর রশীদ, ডিবি প্রধান,  অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিএমপি

 

রাজধানীর মগবাজারে ওয়্যারলেস মোড়ে সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ‘ময়লার ড্রামে’ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য স্প্রিন্টার উদ্ধার করে বলে জানা যায়।

বিস্ফোরকটা কে রেখেছিল, কীভাবে এখানে এসেছে, সেই রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনটাই জানালেন ডিবি প্রধান। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তথ্যেও এবিষয়ে ধোয়াশা কাটছে না।  

পুলিশ সূত্র বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে রাজধানীর মগবাজারে ওয়্যারলেস মোড়ে সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ‘ময়লার ড্রামে’ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য স্প্রিন্টার উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা আগেই সেখানে একটি বোমা রেখে দেওয়া হয়েছিল, যা ময়লা সরানোর সময় বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় প্রকৌশলীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (৩৬), ডিপিডিসির শ্রমিক মো. তারেক (২০), মো. শাহিন (৩০) ও আবুল কালাম (২৫)। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) প্রধান হারুন-অর রশীদ বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্যটি ময়লার একটি প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে ছিল। ভেতর থেকে ময়লা বের করার সময় তা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য স্প্রিন্টারও পাওয়া গেছে। কী উদ্দেশে বিস্ফোরকটি এখানে রাখা হয়েছিল আমরা সেটা বের করার জন্য কাজ করছি। বোম ডিস্পোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছিল, তারা স্প্রিন্টারগুলো আলামত হিসেবে নিয়ে গেছে। 

ডিবি প্রধান বলেন, ময়লার ড্রামটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। একটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে এটা কেন রাখা হয়েছিলো সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ড্রাম থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ফেলে দেয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজন পথচারী। 
ঘটনার পর পর ঘটনাস্থলে আমাদের বোম ডিস্পোজাল টিম গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, আগে থেকেই ড্রামের ভিতরে কেউ বিস্ফোরকটি রেখে দিয়েছিল। অসাবধানতাবশত ফেলে দেয়ার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটে। 

আসাদুজ্জামান বলেন, এটা কী ধরনের বিস্ফোরণ ছিলো, দেশি ককটেল নাকি অন্য কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য তা জানার জন্য আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে।

বিস্ফোরণের বিষয়ে সিটিটিসি কী সন্দেহ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে কোনো কিছু সন্দেহ করছি না। ধারণা, কেউ হয়ত বিস্ফোরকটি রেখে গিয়েছিল। তবে মোটিভ জানতে পারলে আমরা এটা বের করতে পারব। 

এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গি কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো বিষয়ে সন্দেহ করছি না। তবে প্রাথমিকভাবে সকল বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। 

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বিস্ফোরণের আঘাতের চিহ্ন দেখে আমরা ধারণা করতে পারছি, বিস্ফোরণটি বড়ই ছিল।

আহত সাইফুল ইসলাম বলেন, তার বাসা সবুজবাগের বাসাবোতে। মগবাজারে অগ্রণী অ্যাপার্টমেন্টের প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। অফিসের উদ্দেশে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে যান। ওয়ারলেস গেটে উজ্জ্বল হোটেলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। তখন তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখেন। কীভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

আহত শাহীন বলেন, তারা ওয়্যারলেস মোড়ে ডিপিডিসির শ্রমিক হিসেবে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এতে তাদের শরীরেও ক্ষত হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত রয়েছে। ঘটনাটি ককটেল বিস্ফোরণ, নাকি অন্য কিছু তা থানার পুলিশ তদন্ত করছে।

ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ গুরুতর নয়। আহতরা বলেছে, ঘটনাস্থলের আশপাশে তারা কাজ করছিলেন, হঠাৎ একটা বিস্ফোরণে তারা আহত হন।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে একটি ওষুধের দোকানের সামনে থাকা ময়লার ড্রাম বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ড্রামের ভেতরে কী ছিল সেটা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। 

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এখানে বিস্ফোরকের উপাদান পাওয়া গেছে। পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এবি/ জিয়া